হাসপাতালে আমিনুলের স্বজনদের আহাজারি/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। গত ক‌য়েক‌দিন ধ‌রে তার হালকা জ্বর, শরীর দুর্বল ও খাবারে অরুচি। ১০ এপ্রিল কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য নমুনা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো রিপোর্ট পাননি। আজ (১২ এপ্রিল) সকালে তার শরীর আরও দুর্বল হয়। অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। এরপর হাসপাতালে আনার পথেই অ্যাম্বুলেন্সে মারা যান আমিনুল (৪৩)।

সোমবার (১২ এপ্রিল) সকাল সোয়া ১১টায় রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমিনুলকে মৃত ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন আমিনুলের স্ত্রী। কিছু বু‌ঝে ওঠার আগেই প্রিয়জ‌নের মৃত্যুর সংবাদ শুনে হতভম্ব হয়ে যান সঙ্গে আসা স্বজনরা। তাদের কান্নায় জরুরি বিভাগের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। 

আমিনুল ইসলামের আত্মীয় রাজু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, গত ৩১ মার্চ করোনার টিকা নেন আমিনুল। এরপর ১ তারিখ থেকে তার হালকা জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি দেখা দেয়। নাপা খাওয়ার পর তার জ্বর চলে যায়। এরপর আরও কয়েকবার জ্বর এলে করোনা পরীক্ষার  জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নমুনা দেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত তার রিপোর্ট হতে আসেনি। আজ সকালে নাস্তা করে বললেন শরীর ভালো লাগছে না। বসা অবস্থা থেকে তিনি উঠতেও পারছিলেন না। তাকে শোয়ানোর পর মুখ দিয়ে ফেনা চলে আসে। তার যে শ্বাসকষ্ট হয়েছে এটাও আমরা বুঝতে পারিনি। হাসপাতা‌লে আন‌তে আন‌তে তিনি মারাই গেলেন।

ক্ষোভ প্রকাশ ক‌রে রাজু আহমেদ ব‌লেন, করোনা টেস্টের ২৪ ঘণ্টা চলে গেলেও যদি রিপোর্ট না আসে, রিপোর্ট আসার আগেই যদি রোগী মারা যান, তাহলে ওই রিপোর্ট দি‌য়ে আমরা কী করব? তার এক ছেলে, এক মেয়ে। বাচ্চা দু‌টো অসহায় হ‌য়ে গেল।

মুগদা হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগে বেশিরভাগ রোগী আসছে জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে। অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে এমন বে‌ডের স্বল্পতার কারণে অনেক দূর থে‌কে এসে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকে অক্সিজেন ছাড়া বাধ্য হয়ে ভর্তি হচ্ছেন সাধারণ বেডে। কেউ কেউ অক্সিজেন সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

জরু‌রি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে এমন বেড একটাও খালি নেই। তারপরও আমরা রোগী ভর্তি নিচ্ছি। যখন বেড খালি হচ্ছে তখন সাধারণ বেড থে‌কে ওখা‌নে পাঠা‌নো হ‌চ্ছে।

দেশের করোনা পরিস্থিতি

সবশেষ গত ১১ এপ্রিল দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি একদিনে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড। একই সময়ে দেশে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮১৯ জন। এর আগে ১০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

সবমিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৬ জনে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৯ জনের।

রোববার (১১ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২১২ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯০ জন।

এ সময়ে ২৯ হাজার ২৯৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ২৯ হাজার ৩৭৬টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ লাখ ২ হাজার ৮৬৫টি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এসআই/এইচকে/জেএস