করোনা পরিস্থিতির কারণে লেখক-প্রকাশক, দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের উপস্থিতি ছিল কম। এ কারণে এবার খুব একটা জমে উঠতে পারেনি বইমেলা। বছরের পর বছর ধরে বইমেলা হয় পাঠক-লেখকদের মিলনমেলা। এবার সেই অর্থে বইমেলা মিলনমেলায় রূপ নিতে পারেনি। এর মধ্যেই ২৬ দিনের মাথায় আজ (১২ এপ্রিল) পর্দা নামল বইমেলার।

শেষ দিনে মেলা প্রাঙ্গণ খোলার পর থেকে বইপ্রেমীদের ঘুরতে দেখা গেছে স্টলে স্টলে। যদিও দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল অনেক কম। যারা এসেছেন তারা এক স্টল থেকে অন্য স্টলে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত বইয়ের খোঁজে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। অন্যদিকে শেষ দিন হওয়ায় স্টল সংশ্লিষ্টরাও বই গোছাতে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। 

দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে শেষ দিনে বইমেলায় এসেছেন মৌমিতা খাতুন। তিনি বলেন, বইমেলা আমাদের জন্য একটা মিলনমেলা। এই মেলায় আমরা দল বেঁধে আসি, ঘুরি, বই কিনি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। করোনার কারণে এবার ভালোভাবে মেলায় আসতে পারিনি। বইও কেনা হয়নি। তাই আজ শেষ দিনে কিছুটা সময় বের করে মেলায় এসেছি। শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করে দুটি বই কিনেছি।

অনার্য পাবলিকেশনের বিক্রয় ব্যবস্থাপক আল আমিন বলেন, শেষ দিনে তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতাদের ভিড়ও কম। তাই আমরা মালামাল গোছাতে শুরু করেছি। 

মেলার সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি এবং বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, করোনাকালে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্যিক খাত আমাদের প্রকাশনা জগত। আমরা আশা করেছিলাম অমর একুশে বইমেলা ২০২১ আয়োজনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকরা বাণিজ্যিকভাবে কিছুটা লাভের মুখ দেখব, এবারের বইমেলা হবে ইতিহাসের সেরা বইমেলা। কিন্তু করোনার জন্য এবছরের বইমেলায় অর্থনৈতিকভাবে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়েছে প্রকাশকদের।

করোনাভাইরাসের কারণে এবার ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৮ মার্চ বইমেলা শুরু হয়। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলে। কিন্তু দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে ৩১ মার্চ বইমেলার সূচি পরিবর্তন করে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করা হয়।

পরে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় সরকার সাতদিনের জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির পর সময় পরিবর্তন করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বইমেলা চালু রাখা হয়। 

করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও বারবার সময় পরিবর্তন করায় মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি তেমন ছিল না। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন প্রকাশকরা। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা চলবে বলে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগেই (১২ এপ্রিল) শেষ হলো মেলা।

এএসএস/এসএসএইচ/জেএস