জরুরি মুহূর্তের প্রয়োজনকে পুঁজি করে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা

সোমবার সকাল ১০টা। চাচাতো ভাইকে বাড়ি নিয়ে যেতে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন আব্দুল ওয়াহিদ। অনেক কথাবার্তার পর হাসপাতাল থেকে সাভার পর্যন্ত রোগী পৌঁছে দিতে রাজি হন শহিদুল নামে এক অ্যাম্বুলেন্স চালক। ভাড়া সাড়ে ৬ হাজার টাকা।

ধানমন্ডির ওই হাসপাতালটি থেকে সাভারের দূরত্ব ১৮-২০ কিলোমিটার। স্থানীয় একটি অ্যাম্বুলেন্সে ওয়াহিদ সাভার থেকে এসেছিলেন মাত্র দুই হাজার টাকায়। সে হিসেবে বাড়িতে ফিরতে এখন ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩ গুণেরও বেশি।

আব্দুল ওয়াহিদ বললেন, বুকে ব্যথার সমস্যা নিয়ে চাচাত ভাই নুরুল ইসলামকে তিনদিন আগে সাভার থেকে ঢাকায় এনে এই হাসপাতালে ভর্তি করি। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় বাড়িতে নিয়ে যাবো। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করতে গিয়েই বাঁধে বিপত্তি।

তিনি জানান, সাভার থেকে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে ঢাকায় আনতে দুই হাজার টাকা খরচ হলেও এখন বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তিনগুণেরও বেশি টাকায়। ভাড়া বেশি চাওয়ায় বাইরের অ্যাম্বুলেন্স আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখানকার চালকরা বলছে, এই হাসপাতাল থেকে যেতে হলে, তাদের অ্যাম্বুলেন্সেই যেতে হবে।

এদিকে, মাত্র ১৮-২০ কিলোমিটার দূরত্বের রাস্তায় এতো বেশি ভাড়া নেওয়ার কোনো সদুত্তর দিতে পারলেন না অ্যাম্বুলেন্স চালক শহিদুল। অস্বীকার করেন সিন্ডিকেটের কথাও। তিনি বলেন, আমাদের মালিক সমিতি আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

শুধু রাজধানীই নয়, সারাদেশের বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভয়াবহ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। তাদের কাছে প্রতিনিয়তই জিম্মি হতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। জরুরি মুহূর্তের প্রয়োজনীয়তাকে পুঁজি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন স্বাভাবিকের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি টাকা।

কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও ভাড়ার চার্ট না থাকায় রোগীর স্বজনদের চাপে ফেলে যেভাবে পারছেন বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। ঢাকার ভেতরে জরুরি প্রয়োজনে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগী স্থানান্তরে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে পনেরশো টাকা গুনতে হচ্ছে স্বজনদের।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সিরাজুল ইসলামকে জরুরি ভিত্তিতে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এই স্বল্প দূরত্বেও অ্যাম্বুলেন্স চালক স্বজনদের কাছে ভাড়া হাঁকলেন দুই হাজার টাকা। অনেক অনুরোধের পর সবশেষ পনেরশো টাকা নিতে রাজি হলেন তিনি।

রোগীর স্বজন নেহাল হোসেন বলেন, বেশি ভাড়া নিলেও আমাদের কোনো উপায় নেই। জরুরি ভিত্তিতে ঢামেকে রোগী স্থানান্তরের জন্য আমরাও ভাড়া না বলেই তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়েছিলাম। এতো বেশি ভাড়া চাইবে জানলে আগেই ভাড়া ঠিক করে নিতাম।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা অন্যান্য রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, এখানকার বেশির ভাগ অ্যাম্বুলেন্সেই অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। চালকরা অতিরিক্ত টাকার লোভে মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তরিত করেছেন। আর রোগী পরিবহনে তাদের সঙ্গে দর-দামের সুযোগ নেই। যা চাইবে ঠিক তাই দিতে হবে। আর যেসব অ্যাম্বুলেন্স শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এবং অক্সিজেন সুবিধা আছে সেগুলোর ভাড়াও বেশি।

এদিকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে দ্রুতই সরকারিভাবে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে নির্দিষ্ট ভাড়ার নীতিমালা তৈরি হওয়া দরকার বলে মনে করছেন যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল। তিনি বলেন, ভাড়া আদায়ে নির্ধারিত কোনো নীতিমালা না থাকায় রোগী পরিবহনে নিজের ইচ্ছামত ভাড়া নিচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। এক্ষেত্রে মালিক, চালক এবং সরকারের ত্রিপাক্ষিক পর্যালোচনার মাধ্যমে একটি নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন।

আরএইচটি/এমএইচএস