করোনাকালে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা, কর্মরত শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মহীন শ্রমিকদের খাদ্য ও নগদ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা সংক্রমণ স্পষ্ট করেছে যে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সরকারের চেয়েও শক্তিশালী শিল্প মালিকরা। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রায় প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। সেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে। কিন্তু মালিকদের চাপে কারখানা খোলা রাখতে গিয়ে কার্যত সেই ‘লকডাউন’ ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ঘোষণা দিলে শিল্প মালিকরা, বিশেষত গার্মেন্টস শিল্পের মালিকেরা পুনরায় কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিতে বাধ্য করেছে। 

তারা বলেন, গত বছর সাধারণ ছুটির সময় মাত্র এক মাস কারখানা বন্ধ রেখে এবং বন্ধ সময়ের জন্য শ্রমিকদের মজুরির ৩৫ শতাংশ কেটে রাখে। অথচ গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য মাত্র ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে সরকারের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। শিল্প মালিকদের করোনার ক্ষতি মোকাবিলার জন্য মাত্র ৫ শতাংশ সুদে আরও প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এখন এই কয়েকদিনের জন্যই গার্মেন্টস মালিকরা আরও ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণের আবদার করছে। অথচ তারা প্রায় সারা বছর ব্যবসা করেছে। অন্যদিকে দেশের মোট শ্রম শক্তির প্রায় ৮২ শতাংশ শ্রমিক, যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে এবং দিনে এনে দিনে খায়। ‘লকডাউন’ এই শ্রমিকদের কাছে আতঙ্কের নাম। ‘লকডাউনে’ শ্রমিকরা সম্পূর্ণ উপার্জনহীন হয়ে পড়ায় করোনায় মৃত্যুর চেয়ে ক্ষুধার জ্বালা তাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কর্মহীন এই শ্রমজীবী মানুষদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে ‘লকডাউন’ দিয়ে করোনা সংক্রমণ রোধের চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। গত বছর এই শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সাতটি খাতে ১০ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তার মাত্র ৪৮ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ১৭ লাখ। নির্ভরশীলতার হার প্রায় ৪৮ শতাংশ। আর ৪.৫ শতাংশ বেকার এবং তাদের ওপর নির্ভরশীলদের যুক্ত করলে ‘লকডাউনে’ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়া শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটিতে। এই মানুষদের এক মাসের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হবে সর্বোচ্চ ২০ হাজার কোটি টাকা। আর খাদ্য বহির্ভূত জরুরি প্রয়োজনের জন্য আরও ১৬ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ মোট ৩৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে এক মাস ঘরে রেখে ‘লকডাউন’ কার্যকর করা সম্ভব। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করতে সরকারের টাকার অভাব নয়, নীতির অভাব রয়েছে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী। এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের আহ্বায়ক রাশেদুর রহমান রাশেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহানা ইয়াসমিন, সাহিদুল ইসলাম শহিদ, মহিউদ্দিন আহমেদ রিমেল প্রমুখ।

এমএইচএন/এসএসএইচ