যেকোনো সমাজে সহিংসতার প্রভাব সাংঘাতিক। সহিংসতা পুরো প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর নারীর প্রতি সহিংসতা নারীর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ বৃদ্ধি জরুরি। 

রোববার (২৬ নভেম্বর) ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ বাংলাদেশ এবং এলসিজিওয়েজের যৌথ উদ্যোগে ১৬দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের উদ্বোধনী দিনে বক্তারা এ কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, বিশ্বে প্রতি তিনজনে একজন নারী সহিংসতার শিকার। সহিংসতা নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিকসহ সব ধরনের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে নতুন আকার দিতে পারি। নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি, বদ্ধমূল মানসিকতা এবং আচরণের পরিবর্তন অপরিহার্য। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তিনি বলেন, আইন প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ অপরিহার্য। সামগ্রিকভাবে লিঙ্গ সমতা বাজেট বরাদ্দ ট্র্যাক করার জন্য একটি সুসমন্বিত ব্যবস্থা প্রয়োজন।

সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে বলেন, একটি সমাজ, সম্প্রদায়, পরিবার ও মানুষ হিসাবে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার জন্য আমাদের অপরিসীম মাশুল গুণতে হয়। সহিংসতার প্রভাব প্রজন্মকে আবিষ্ট করে রাখে। সমস্ত স্তরে সম্পদ নষ্ট করে। তাই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ কেবল সঠিক নয়, বুদ্ধিমানের কাজ।

ইউএন উইমেন কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আইনগুলোর বার্ষিক পর্যবেক্ষণ এবং তাদের প্রাসঙ্গিক রাখার জন্য সময়োপযোগী সংশোধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে বর্তমানে বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়। সরকারকে অবশ্যই বিভিন্ন সেক্টর থেকে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং জেন্ডার-প্রতিক্রিয়াশীল বাজেটিংয়ের মাধ্যমে জাতীয় বাজেট সামঞ্জস্য করতে হবে। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউএনএফপিএ কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ক্রিস্টিন ব্লকউস, অধ্যাপক তানিয়া হক ও ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টোরাল প্রোগামের প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী।

গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মূল্যায়ন করে একটি বিস্তারিত গবেষণাপত্র সভায় উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ। আইএলও, ইউএনএফপিএ এবং ইউএন উইমেনের সাম্প্রতিক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাপত্রটি তৈরি করা হয়। এতে প্রয়োজনীয় উন্নতির ওপর আলোকপাত করে আইনি ফাঁকফোকর বন্ধ করা এবং এর সামর্থ্যের ওপর জোর দেওয়া হয়। 

বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। বৈশ্বিক সমস্যা। অধিকাংশ নারী পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়। এ সহিংসতা সামাজিক রীতিনীতি, আচার, আচরণ এবং পুরুষের মনমানসিকতা দ্বারাও প্রভাবিত হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।

এআর/কেএ