প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা ও অপরাধ প্রমাণে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ না থাকার কারণে সাইবার সহিংসতায় বেশিরভাগ নারীরাই ভুক্তভোগী হয়। ফলে অনেক অপরাধী মুক্তি পেয়ে যায়। 

সাইবার দুনিয়া একটি মুক্ত জায়গা, যেখানে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই দিতে হবে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা: বাস্তবতা ও করণীয় শীর্ষক বিষয়ে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, নাগরিকদের প্রযুক্তি ব্যবহারে স্মার্ট হতে হবে। ৬৩% শিশু কিশোর বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় পর্ণোগ্রাফিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোকে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। 

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। ৮০% ভুক্তভোগী আইনের আশ্রয় নেন না, আইনি সেবায় সন্তোষ না থাকার কারণে। সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহার তদারকি করতে প্যারেনটাল গাইড থাকতে হবে।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, সাইবার নিরাপত্তায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি অভিভাবকদের বাচ্চাদের ইন্টারনেটের ব্যবহার মনিটরিং করতে হবে, তাদেরকে ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে মেধা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। 

সোশাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক এদেশে নেই। এরপরও বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিটিআরসির উদ্যোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৩৫০০০ হাজার আপত্তিকর কনটেন্ট ফেসবুক থেকে আলোচনার মাধ্যমে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) এ এম জুলফিকার হায়াত বলেন, সাইবার স্পেসে নারীদের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহারের আগে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে; ফেসবুক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে; একটি নির্দিষ্ট বয়সের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়া থেকে  অভিভাবকদের বিরত থাকতে হবে। 

তিনি নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে একাধিক সিমকার্ড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং টিকটক, ইমো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনি নীতিমালা তৈরির উপর জোর দেন।

বাংলাদেশ পুলিশ এর স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (প্রটেকশন এন্ড প্রটোকল) আমেনা বেগম বলেন, মাঠ পর্যায়ে ৬৫৯টি পুলিশি থানা আছে। এসকল থানার কেস তদন্ত কর্মকর্তাদের সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধ সংক্রান্ত  প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। 

এতে ঢাকা সিটির চাইতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের সাইবার সহিংসতার শিকার হওয়া ঝুঁকি বেশি। পুলিশের সাইবার সাপোর্ট টিমে মাত্র ১৫-১৬ জন জনবল রয়েছে যারা ৭০০০০ হাজার অভিযোগ পেয়েছে। সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে সাইবার সাপোর্ট টিমের জনবল বৃদ্ধি করতে হবে; সচেতনতা শিশুবেলা থেকেই তৈরি করতে হবে; ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমএম/এমএসএ