অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগসমূহ (এনটিডি) মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট তহবিলে ৭৭৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।

রোববার (০৩ ডিসেম্বর) দুবাইয়ে এক্সপো সিটিতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এ প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ব নেতারা।  

ইউএইর রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ঘোষণা দেন, ইয়েমেন এবং ৩৯টি আফ্রিকান দেশের স্বার্থে রিচিং দ্য লাস্ট মাইল (আরএলএম) তহবিল সম্প্রসারণের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার দেবে তার দেশ। এছাড়া অন্যান্য নেতারাও তহবিলে অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

কপ-২৮ এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইউএই এবং বিশ্ব দাতারা অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগকে পরাস্ত করতে এবং ১৬০ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করতে ৭৭৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সমর্থিত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উদ্যোগ রিচিং দ্য লাস্ট মাইলের (আরএলএম) অঙ্গীকারমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। 

জলবায়ু সম্মেলনের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এ প্রতিশ্রুতি এই রোগের বোঝা থেকে মানুষকে মুক্ত করবে। একই সঙ্গে মহাদেশজুড়ে লক্ষ-লক্ষ মানুষের সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করবে।

গত ৩০ নভেম্বর থেকে জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

সম্মেলনে ইতোমধ্যে তহবিল অনুমোদন করেছে তেলের অন্যতম বড় উৎপাদক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উন্নত আরও কয়েকটি দেশের তরফ থেকেও এমন সহায়তার আশ্বাস এসেছে। এসব দেশগুলো প্রথম দিনেই ৪২ কোটির বেশি ডলার তহবিল ভুক্তভোগী অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেয়।

প্রথমেই তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আছে, সম্মেলনের আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ১০ কোটি ডলার, যুক্তরাজ্য ৬ কোটি পাউন্ড, যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং জাপান ১ কোটি ডলার। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নও ২৪ কোটি ৫৩৯ লাখ ডলার এবং জার্মানি ১০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

১৭৬০ সালের পর ইউরোপে যখন শিল্পবিপ্লবের সূচনা তখন থেকেই প্রকৃতির বিপদের শুরু। তখন থেকেই পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ শুরু হয়। এর ফলে দিন দিন বাতাসের উষ্ণতা বেড়েছে; হয়েছে বায়ুদূষণ।  

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে একবিংশ শতাব্দী শেষে পৃথিবীর বুক থেকে প্রায় অর্ধশত দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা, খরা, দাবানল বেশি হচ্ছে। এ কারণে এবারের জলবায়ু সম্মেলনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। 

প্রথম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানির বার্লিনে ১৯৯৫ সালে। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কপ-২১ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো প্যারিস চুক্তিতে অনুমোদন দেয়। এই প্যারিস চুক্তি ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় রাষ্ট্রগুলোর করণীয় নির্ধারণে একটি যুগান্তকারী চুক্তি। 

এসএইচআর/এসকেডি