পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাবে প্রত্যাবাসন করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ অবস্থায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বপ্নের সোনার বাংলা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। তাদের ওখান থেকে যেসব রোহিঙ্গা আমাদের এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে, আমরা চাই তারা স্বেচ্ছায় তাদের নিজ ভূমে ফিরে যাক। আমরা দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েও মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাবে ব্যর্থ হয়েছি।’

এখনও একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবর্তন করতে না পারায় আক্ষেপ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনও একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করতে পারিনি। কিন্তু আমরা চাই তারা ফিরে যাক। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বলব, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরাতে আপনারা এগিয়ে আসুন। আপনারা মিয়ানমারকে চাপ দিন।’

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঞ্চলনায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রিয়াদ মালেকী, জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ড. মালেক তাওয়াল, দেশটির সাবেক সিনেটর ড. সুশান মাজআলী এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বক্তব্য রাখেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

গত বছর দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।

এদিকে আজ দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের একটি দলকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সোয়া নয়টার দিকে নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে করে রোহিঙ্গা দলটি ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়।

রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলে চার শতাধিক পরিবারের ১ হাজার ৮০৪ জন নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে।

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এক লাখকে নিরাপদ আশ্রয় দিতেই দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয় করে ভাসানচরে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করে সরকার। পরিকল্পিতভাবে আবাসন গড়ে তোলা এ দ্বীপে অনেক আগ থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের চিন্তা-ভাবনা করছিল সরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের চাপে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না।

অবশেষে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে উখিয়ার কয়েকটি ক্যাম্প থেকে বাসে ও জাহাজে করে দুদিনের দীর্ঘ যাত্রা শেষে এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার একটি দলটি সেখানে পাঠায় সরকার।

এনআই/এসএম