বিধিনিষেধে ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কারের দাপট
করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বাত্মক বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। নির্দেশনা অনুসারে সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে। তবে বিধিনিষেধের প্রথমদিন রাজধানী অনেকটা ফাঁকা থাকলেও দ্বিতীয় দিনে (বৃহস্পতিবার) বেড়েছে সাধারণ মানুষ ও ব্যক্তিগত গাড়ি।
মুভমেন্ট পাস নিয়ে এসব গাড়ি ব্যবহারকারীরা আবার আটকাও পড়ছেন স্থানে স্থানে। দিনের প্রথমভাগেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ’কার্যত লকডাউনের’ ঢাকায়।
বিজ্ঞাপন
১৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাজধানী ঢাকার প্রগতি সরণি, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, গুলশান-তেজগাঁও সংযোগ সড়ক, ধানমন্ডি, মিরপুর রোডসহ বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্টে পুলিশের তৎপরতায় গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা দেয়। বিভিন্ন গাড়ির সারির মধ্যে প্রাইভেট কারই ছিল বেশি। প্রগতি সরণির বাড্ডামুখী লেনেই গাড়ির সারি ছিল সকাল আটটা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এই গাড়ির সারির মধ্যে প্রাইভেট কারই ছিল সিংহভাগ। নর্দা পদাচারী সেতুর কাছে প্রাইভেট কারের এত আধিক্য দেখে পথচারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় কত প্রাইভেট কার আছে, এখন বোঝা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, সারা দেশে নিবন্ধিত গাড়ির মধ্যে ঢাকায় নিবন্ধিত প্রাইভেট কারই প্রায় ৮২ শতাংশ। দুই বছর আগেও তা ছিল ৭৮ শতাংশ। তার মানে, ঢাকায় নিবন্ধিত প্রাইভেট কার বাড়ছেই।
বিজ্ঞাপন
অর্থনৈতিক-রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের মূল স্রোত রাজধানীকেন্দ্রিক। আর তাই মানুষের যাতায়াতের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল-ইএনএফপিএর পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বসবাস ঢাকা ও এর আশপাশে।
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন, সাভার ও কেরানীগঞ্জ ঢাকা মেগা সিটির অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়তন বেড়েছে। আগের আয়তন ১২৯ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭০ বর্গকিলোমিটার। আটটি করে উভয় সিটি করপোরেশনে ১৬টি ইউনিয়ন যোগ হয়েছে। কিন্তু নতুন যোগ হওয়া ১৪১ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে সড়ক বাড়েনি। মূল মহানগরীতে কুড়িল, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, বনানী, জিল্লুর রহমান উড়াল সড়ক, হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্পের অধীন পূর্ব-পশ্চিমে সড়কসহ কিছু সড়ক বেড়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের গবেষণায় বের হয়েছে, যানজটের বড় কারণ ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত না করা। সংস্থার গবেষণা ফেলো ড. মো. শাহনেওয়াজ হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। গবেষণায় বের হয়েছে, যানজটের কারণে বিমানবন্দর থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ২৬ কি.মি. একটি রুটেই দিনে ক্ষতি হচ্ছে ২২৭ কোটি টাকা। এখন কার্যত লকডাউনেও প্রাইভেট কারের অধিক্যে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজধানীর প্রগতি সরণির কোকাকোলা এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে চেকিংয়ের ফলে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকে যাটজট শুরু হয়। তা চলে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। যানজট ছাড়িয়ে যায় কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা গেছে, গাড়ির দীর্ঘ সারিতে অধিকাংশই ছিল ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার)। এছাড়া কিছু স্টাফ বাস এবং মালবাহী লরি ছিল। ছিল ৪-৫টি অ্যাম্বুলেন্সও। স্বাভাবিক সময়েও এই যানজট থাকে না বলে জানান গাড়ির সারিতে আটকে পড়া প্রাইভেট কার চালক মহসীন আলী।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুভমেন্ট পাস নিয়ে বসে আছি, চেক করবে তারপর যাব। যাত্রাবাড়ী যাবার পথে আর কত বার যে এভাবে আটকে পড়তে হবে, কে জানে?
বিমান বন্দর সড়কের জসীমউদ্দিন মোড়, কাওলা, কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে গাড়ির সারি ছিল। কুর্মিটোলা হাসপাতালের বিপরীতে বসানো চেকপোস্টেও গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীরা আটকা পড়েন, প্রাইভেট কারে জরুরি সেবার কর্মীরাও আটকা পড়েন। সকাল আটটায় ৬০ ফিট সড়কের স্থানে স্থানে প্রাইভেট কারের জট ছিল। বিজয় সরণির উড়োজাহাজ মোড়ে যানজট ছিল। এখানে আশপাশে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য সড়ক সঙ্কুচিত থাকায় জটে আটকা পড়ে একের পর এক গাড়ি। তার মধ্যে প্রাইভেট কারের আধিক্য ছিল।
এখানে ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্য মো. কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনেও এতো প্রাইভেট কার ঢাকায়, বিশ্বাস করা যায় না।
পিএসডি/এসএম