অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া ঠেকাতে র‍্যাব অভিযান চালাচ্ছে

করোনার সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ ঘোষণার পরেও অনেকেই বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। এতে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) অভিযান চালিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তকে অবহেলা করা এসব ব্যক্তিকে জরিমানা করেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

ডাক্তারদের গিফটের খেজুর বহন

শাহবাগ মোড়ে একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির গাড়ি আটকায় র‍্যাব। গাড়ির স্টিকারে লেখা ‘জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত’। গ্লাস নামিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট দেখলেন গাড়ির ভেতরে কয়েকটি কার্টন। কিসের কার্টন জানতে চাইলে চালক জানালেন, খেজুরের বক্স। ডাক্তারদের গিফট করার জন্য কোম্পানি থেকে পাঠানো হয়েছে।

‘কাজটি জরুরি না হওয়ায় ওই চালককে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় জাহাঙ্গীর নামের ওই চালক প্রথমে জরিমানা দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি শুধুমাত্র চালক, আমার কাছে এতো টাকা নাই। তাছাড়া আমি কেন জরিমানা দেবো।’

এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আপনি জরিমানা সংগ্রহ করে দেন। নয়ত তিনদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’ পরে অবশ্য ওই চালক জরিমানা দিয়ে মুক্তি পান।

মাস্ক খুলে ফোনে কথা বলা, কাস্টমস কর্মকর্তার জরিমানা

শাহবাগ থেকে হাতিরপুলের দিকে রিকশায় যাওয়া মানু মন্ডল। গলায় বাংলাদেশ কাস্টমসের আইডি কার্ড ঝুলানো। ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞেস করলেন, কাস্টমস অফিস কি খোলা? আপনি কোথায় যাচ্ছেন? মাস্ক খুলে ফোনে কথা বলেছেন কেন? কর্মকর্তা কোনো কথা বললেন না। বললেন, ‘আমার ভুল হয়েছে, আমাকে জরিমানা করেন।’ পরে ওই কর্মকর্তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলা এই অভিযানে মোট ১১ জনকে ৬২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি জরিমানা গুনছেন সিএনজি অটোরিকশা ও উবার-পাঠাও চালকরা।

অধিকাংশ জরিমানা গুনেছেন উবার-পাঠাও-সিএনজি চালকরা

৫০০ টাকা জরিমানা গোনা পাঠাও-কার চালক সুরুজ শিকদার বলেন, আমাকে পাঠাও থেকে বলা হয়েছিল গাড়ি চালানো জরুরি কাজ। তাই আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম। কিন্তু এখানে আমাকে জরিমানা করা হলো।

তমা ট্যাক্সি চালক নুরুল হকও ৫০০ টাকার জরিমানা খেয়েছেন। তিনি বললেন, পাশের বাসার একজনের মেয়েকে হাসপাতাল থেকে আজ রিলিজ দেওয়া হবে। তাকে আনতে যাওয়ার সময় আমাকে জরিমানা করা হলো। এদিকে মাস্ক না থাকায় রবিন আহমেদ নামে এক সিএনজি চালককে ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ১৮টি নির্দেশনা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কঠোর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে অভিযান চালাচ্ছি। অনেকেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে 'কম প্রয়োজনে' বাইরে বের হচ্ছেন। তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য জরিমানা নয়, আমরা সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করতেই অভিযান চালাচ্ছি।

এদিকে করোনার সংক্রমণ রুখতে সরকার দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। ১৪ এপ্রিল থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। এর আগে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেওয়া হয় শপিংমলও। এতে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।

এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।

এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।

এআর/এমএইচএস