বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রহসন এবং বৈষম্যমূলক নন-ক্যাডার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশে শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ৪৩তম বিসিএসের ফল প্রত্যাশীরা।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে এগারোটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তারা। এসময় ৪৩তম বিসিএসে নন-ক্যাডার বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে পদসংখ্যা বৃদ্ধির দাবিও জানান তারা।

এতে উপস্থিত ফল প্রত্যাশীরা বলেন, বিপিএসসি থেকে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে ধাপে ধাপে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় অংশগ্রহণের পর আমরা যখন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে একটি ক্যাডার অথবা নন-ক্যাডার থেকে চাকুরি পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই জানতে পারি ৪৩তম বিসিএস থেকে ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের ফলাফল একসাথে প্রকাশ করতে যাচ্ছে পিএসসি। তড়িঘড়ি করে নেওয়া এ অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ৪৩তম চাকুরি প্রার্থীদের ওপর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।

তারা বলেন, আমাদেরকে হতাশ করে বিপিএসসি গত ১৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে কতগুলো অকার্যকর পদসহ মাত্র ১ হাজার ৩৪২টি পদের একটি নন-ক্যাডার পছন্দ তালিকা প্রকাশ করেছে। আমরা এ বৈষম্যমূলক প্রহসনের নন-ক্যাডার বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ক্যাডার, নন-ক্যাডার ফল আলাদা প্রকাশের দাবি জানাই। যাতে করে বিপিএসসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদসংখ্যা বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত সময় পায় এবং পূর্ববর্তী বিসিএসগুলোর ন্যায় নন-ক্যাডার হতে অধিক পরিমাণ চাকুরি প্রদানের ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারে।

তারা অভিযোগ করেন, পিএসসি তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধির পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের শিক্ষিত সমাজ সবচেয়ে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া বিসিএসের প্রতি আস্থা হারাবে। ফলে বাংলাদেশ থেকে মেধা পাচার বেড়ে যাবে, যা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রধান অন্তরায়।

৪৩তম বিসিএসের ফল প্রত্যাশীদের মুখপাত্র নাসির উদ্দিন বলেন, আগে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার ফল পৃথকভাবে প্রকাশিত হতো। ফলে বিসিএস পরীক্ষায় সর্বমোট ১ হাজার ৫০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ক্যাডার বঞ্চিত যোগ্য মেধাবী প্রার্থীরা অধিক সংখ্যক নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হতেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নন-ক্যাডার থেকে বেশি সংখ্যক নিয়ে নিয়োগ দেওয়াকে উৎসাহিত করলেও বর্তমান কমিশন কেন নন-ক্যাডার পদে নিয়োগকে সংকুচিত করছে সেটিও আমাদের মনে প্রশ্ন তৈরি করেছে। তাই আমাদের দাবি, সদ্য প্রকাশিত ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে বিধি অনুযায়ী ৪৫তম বিসিএস থেকে ক্যাডার ও নন ক্যাডার ফলাফল একইসঙ্গে প্রকাশ করা হোক। একইসঙ্গে পূর্বের বিসিএস অনুযায়ী ৪৩তম বিসিএসেও অধিক সংখ্যক প্রার্থীকে সুপারিশ করা হোক।

তিনি আরও বলেন, আমরা পিএসসিকে এমন সিদ্ধান্ত পুনরায় মূল্যায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। সদ্য প্রকাশিত নন ক্যাডার পছন্দ তালিকা বাতিল করে অধিকসংখ্যক প্রার্থীর চাকরির সুপারিশের ব্যবস্থা এবং আগের বিসিএসগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈষম্য হ্রাস করতে হবে। কারণ ৩৮তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে ২ হাজার ৯৬৫ জনকে সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর এটিকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য ৪০ বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের উদ্যোগ নেয় পিএসসি। ওই বিসিএসে নন-ক্যাডারের জন্য ৪ হাজার ৪৭৮ পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যেখান থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত হন ৩ হাজার ৬৫৭ জন। ৪১তম বিসিএসে যে-ক্যাডারের বিজ্ঞপ্তি ছিল ৪ হাজার ৫৩ জন সেখান থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত হন ৩ হাজার ১৬৪ জন। বাকি পদগুলো যোগ্য প্রার্থীর অভাবে শূন্য থাকে। আর ৪৩তম বিসিএসে নন-ক্যাডার বিজ্ঞপ্তিতে মাত্র ১ হাজার ৩৪২টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ আছে মাত্র ৩৬০টি পদ। যা নজিরবিহীন এবং বৈষম্যমূলক। 

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তারপর ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের জুলাই মাসে লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে পিএসসি। গত ২০ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮৪১ জন। এ বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৮১৪ কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ১০০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫, শিক্ষা ক্যাডারে ৮৪৩, অডিটে ৩৫, তথ্যে ২২, ট্যাক্সে ১৯, কাস্টমসে ১৪ ও সমবায়ে ১৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

আরএইচটি/পিএইচ