প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসে গত বছরের ৬ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের ১৪ কর্মকর্তা। এছাড়া অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা তিনজন এবং অবসরে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন আরও আট কর্মকর্তা। সবমিলিয়ে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের ২৫ কর্মকর্তা। 

প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারে মোট ৬ হাজার ৩২৭ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা। 

যাদের প্রাণ গেল করোনায়

দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক এবং প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তা জালাল সাইফুর রহমান। ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার
গেল বছরের ৯ মে মারা যান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার। এদিন বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রতিরক্ষা সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী। গত বছরের ২৯ জুন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী।

বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম
একই বছরের ২৩ জুন বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমিনুল ইসলামের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর তিনি রাজশাহীতে স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে চলে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ জুলাই মারা যান তিনি।

মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ফখরুল কবীর 
গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ফখরুল কবীর। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ৮ জুন মারা যান এই কর্মকর্তা।

পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান লুৎফর রহমান তরফদার
১৭ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যোগাযোগ উইংয়ের যুগ্ম প্রধান (যুগ্ম সচিব) মো. লুৎফর রহমান তরফদার। রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে রহমান তরফদারের বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর।

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহম্মদ
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল (শনিবার) ভোর সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. এ কে এম রফিক আহম্মদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।

তথ্য কমিশনের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম খান
সিরাজুল ইসলাম খান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি ২৩ নভেম্বর সকাল ৬টা ২০ মিনিটে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

যুগ্ম সচিব খন্দকার অলিউর রহমান
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সচিব খন্দকার অলিউর রহমান। ৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। খন্দকার অলিউর রহমান বিসিএস ১৭তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। 

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ ও প্রশাসন) যুগ্ম সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ১৬ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লিয়াকত আলী
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন যুগ্ম সচিব মো. লিয়াকত আলী (৫৬)। তিনি বিলুপ্ত বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল খায়ের মো. মারুফ হাসান
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল খায়ের মো. মারুফ হাসান। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তা মারুফ হাসান করোনার উপসর্গ নিয়ে ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। 

এছাড়া যুগ্ম সচিব শামস ই আরা বিনতে হুদা ও সিনিয়র সহকারী সচিব এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা অবস্থায় মারা গেছেন তিনজন কর্মকর্তা। তারা হলেন- অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আলম, অতিরিক্ত সচিব নূর হোসেন তালুকদার ও যুগ্ম সচিব খুরশীদ আলম। 

অন্যদিকে, অবসরে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আট কর্মকর্তা। তারা হলেন- সাবেক সচিব বজলুল করিম চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সচিব সামছুল কিবরিয়া চৌধুরী, আ. রশিদ, মোহাম্মদ আলী (৭০ ব্যাচ), ইসহাক ভূইয়া (৭৩ ব্যাচ), সরওয়ারী আলম (১৯৭০ ব্যাচ), ওয়াজেদ আলী খান (৮১ ব্যাচ) ও তপন কুমার সরকার (৮৫ ব্যাচ)।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার এই সংক্রমণের সময় আমরা সব কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক থেকে কাজ করতে বলেছি। 

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, কর্মকর্তাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মারা গেলে তাদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

এসএইচআর/ওএফ/জেএস