বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল কিট এবং রি-এজেন্ট সনদ জব্দ করা হয়েছে/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও বনানী থেকে অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানি, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্ট জালিয়াত চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল কিট এবং রি-এজেন্ট সনদ জব্দ করা হয়। এসব কিট ও রি-এজেন্ট করোনা, এইডস, নিউমোনিয়া, ক্যানসার ও ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হতো।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় র‍্যাব-২ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। র‍্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করছে। এছাড়া করোনা টেস্টিং কিটসহ ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল ডিভাইস মজুত ও বাজারজাত করে আসছে।

৯ জনকে আটক করেছে র‍্যাব/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. শামীম মোল্লা (৪০), ম্যানেজার মো. শহীদুল আলম (৪২), ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির (২৪), অফিস সহকারী মো. জিয়াউর রহমান (৩৫), হিসাব রক্ষক মো. সুমন (৩৫), অফিস ক্লার্ক ও মার্কেটিং অফিসার জাহিদুল আমিন পুলক (২৭), সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানা (২৮), এক্সন টেকনলজিস অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মো. মাহমুদুল হাসান (৪০) এবং হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেডের এমডি এস এম মোস্তফা কামাল (৪৮)।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত র‍্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার লালমাটিয়া এলাকায় অবস্থিত বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানী থানা এলাকায় অবস্থিত এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস লি. এবং হাইটেক হেলথকেয়ার লি. নামে ৩টি প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজে অভিযান পরিচালনা করে। র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। 

ঘটনাস্থলে আভিযানিক দল দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরনের প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টসমূহের মেয়াদ বাড়ানোর কাজ চলছে। পরবর্তীতে তাদের ওয়্যারহাউজে তল্লাশিকালে অভিযানকারী দলের সামনে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

‘সেখানে মজুত বেশির ভাগ মেডিকেল ডিভাইস অননুমোদিত, প্রায় সকল প্রকার টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টস মেয়াদোত্তীর্ণ বা কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। এ সময় ৩টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী চক্রের ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।’

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার আরও জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, অধিক মুনাফার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ও সহসা মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে এমন টেস্ট কিট ও রি-এজন্টেমূহ দেশি-বিদেশি আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে তারা অতি অল্প দামে সংগ্রহ করত। তারপর পুনরায় মেয়াদ বসিয়ে বিশেষ মুদ্রণ যন্ত্রের সাহায্যে মুদ্রণ বা টেম্পারিং করে বাজারে সরবরাহ করত। প্রতিষ্ঠান ৩টি ১০ বছর ধরে বিভিন্ন নামে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার জানান, এরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এগুলো সাপ্লাই করত। এই রি-এজেন্ট ও টেস্ট কিট চীন থেকে আমদানি করা হতো। রি-এজেন্ট ও টেস্ট কিটের লেভেল বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তৈরি করে পুনরায় টেম্পারিং করে লাগানো হতো।

আটককৃতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা।

এসএএ/এইচকে/জেএস