আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের কাছে সহায়তা চেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ডিএমপির সঙ্গে দুই সিটির কাউন্সিলরদের আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় ভোটার আনা ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই সভায় নির্বাচনে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা হয়।

সভা সূত্রে জানা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই চ্যালেঞ্জ মনে করছে ডিএমপি। এ ক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা ভোটারদের কেন্দ্রে আনার কাজ করবেন। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন পুলিশ সদস্যরা। ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সভায় জানানো হয়।

মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ভোট দেওয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট না দেওয়াও গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়। যারা ভোট ঠেকাতে আসে তাদের অপতৎপরতা প্রতিহত করাও সাংবিধানিক দায়িত্ব।

কাউন্সিলরদের কাছ থেকে কোনো ঝুঁকি কিংবা নাশকতার তথ্য পেয়েছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচন উপলক্ষ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি নেই, নাশকতা নেই। কাউন্সিলররা জানিয়েছেন— তাদের এলাকার লোকজন ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন, সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবেন।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় দুটি সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। সেখানে ১৭২ জন কাউন্সিলর রয়েছে। আজকে কাউন্সিলরদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কার কোন এলাকায়, কী সমস্যা আছে; সেটি আমাদেরকে অবহিত করেছেন তারা। এ ছাড়া, একাধিক রাজনৈতিক দলের নাশকতা সংক্রান্ত কিছু কার্যক্রম, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম— যেগুলো হচ্ছে সেগুলো প্রতিরোধে পুলিশের সঙ্গে কাউন্সিলররা একসঙ্গে কাজ করবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে ভোটদানে নিরুৎসাহিত ও বাধা কেউ না দিতে পারে সেজন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। তারাও ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে চেয়েছে এবং আগামী দিনে সবাই যেন ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে সেজন্য আমরা বদ্ধ পরিকর।

সভায় আরও যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়

১।  এলাকাভিত্তিক অপরাধ ও অপরাধী সংক্রান্ত তথ্য প্রদান।

২। মাদক কারবারি ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান।

৩। ছিনতাইকারী ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান।

৪। ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান।

৫। এলাকাভিত্তিক নাশকতাকারী, অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে তথ্য প্রদান।

৬। ভবঘুরে ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান।

৭। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সহায়তা করা।

৮।  নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

৯। থানায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য প্রদানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে উৎসাহিত করা, ছাত্রাবাস, মেস, আবাসিক হোটেল প্রভৃতিতে অবস্থানরত সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে তথ্য প্রদান।

১০। অপরাধপ্রবণ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করা।

১১। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

১২। আইন মান্যতায় সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা।

১৩। আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে জনগণকে উৎসাহিত করা।

১৪। বিট পুলিশিং কর্মকর্তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা।

১৫। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহায়তা করা।

১৬। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা যেন অবাধে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করা।

১৭। ডিএমপি অন্তর্ভুক্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার ও গুজব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

এমএসি/এমজে