সন্ধ্যা নামতেই রাজধানীর অলিগলিতে জমছে আড্ডা

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশেই চলছে সাতদিনের বিধিনিষেধ। বিধিনিষেধে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। 

এছাড়াও জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত মানুষের জমায়েত বা ঘরের বাইরে বের না হতেও বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। সরকারি সিদ্ধান্ত না মেনেই ইফতারের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে চলছে চা-সিগারেটের আড্ডা।

প্রশাসনের কড়াকড়িতে মহাসড়কের আশেপাশের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে থাকা দোকানগুলো সন্ধ্যা নামতেই সরব হয়ে ওঠে। যেকোনো মুহূর্তে টহল পুলিশ আসতে পারে এই ভয়ে সম্পূর্ণ দোকান না খুলে চতুর দোকানিরা শুধুমাত্র শাটারের (গেটের) অর্ধেক খুলে বেচাকেনা করছেন।

আবার অনেক দোকানিকে প্রশাসনিক ঝামেলা বিবেচনায় দোকানের সামনের সিঁড়িতে বাজারের ব্যাগে সিগারেট এবং ফ্লাস্কে করে চা বিক্রি করতেও দেখা যায়। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর রাজধানীর শুক্রাবাদ, কলাবাগান, পান্থপথ ও আশেপাশের আবাসিক এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। 

তবে এসব দোকানিরা বলছেন, নিরুপায় হয়েই তারা নির্দেশনা অমান্য করছেন। হাসেম বেপারী নামে এক দোকানি বলেন, করোনাকালে দোকান বন্ধ থাকলেও দোকান ভাড়া মাফ হয়নি। করোনার আগেও যেমন দোকান ভাড়া দিতাম এখনও তেমনটিই দিতে হচ্ছে। তাই একেবারে যদি কিছু বিক্রি না করি, তাহলে দোকান ভাড়া পরিশোধ করব কীভাবে? 

আরেক চা দোকানি হাসিবুল আলম বলেন, সন্ধ্যা ছয়টায় দোকান বন্ধ করার কথা। কিন্তু মানুষ রোজা রাখায় ইফতারের আগে তেমন একটা দোকানে আসে না। ইফতারের পরেই দোকানে কিছুটা বেচা-বিক্রি হয়। মানুষজন আসে, চা-সিগারেট খায়। আর বিক্রি যদি একেবারেই বন্ধ থাকে তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা না খেয়ে মরব। এমন অবস্থায় সরকার যদি আমাদের কিছুটা সহযোগিতা করত, তবে আমরা উপকৃত হতাম।

অলিগলির এসব দোকানে চা পান করতে আসা মানুষজনও স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন। তারা শুধু চা পান বা ধূমপানই করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন না, রীতিমতো আড্ডা জমিয়ে দীর্ঘ সময় আলাপচারিতায় মগ্নও হচ্ছেন।

এত মৃত্যুর পরও স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারে কেন এই উদাসীনতা- এমন প্রশ্নের জবাবে চা পান করতে আসা জহির উদ্দিন নামে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বলেন, সারাদিন রোজা রেখে শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসে। তাই ক্লান্তি দূর করতে চা পান করতে আসি। আর এখানে যারা আছে সবাই আমরা একই বিল্ডিংয়ে থাকি তাই চা খেতে খেতে একটু কথাবার্তা বলছি। চা খাওয়া হলেই ঘরে ফিরে যাব।

কিন্তু এই মুহূর্তে করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানি রোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের বিকল্প কিছু দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে না। জোর করে মানুষকে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করানো যাবে না। সবাইকে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

আরএইচটি/আরএইচ