বিধিনিষেধের তিন দিনে বায়ুদূষণ কমেছে ৩৯ শতাংশ
কমেছে ঢাকার বায়ুদূষণ
বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষের দিকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নাম বরাবরই থাকে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের দুদিন যেতেই অনেকটাই কমে এসেছে দূষণ। এতে তালিকায় পিছিয়েছে ঢাকার অবস্থান।
সরকারের আরোপ করা বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে ১৪ এপ্রিল থেকে। শুরুর দুদিন পর অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। এছাড়া দিনের কোনো কোনো সময় শহরের কোথাও কোথাও ৭০ ভাগ পর্যন্তও দূষণ কমেছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পাঠানো একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। তবে বায়ুদূষণ পরিমাণ কমার পেছনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধিনিষেধ চলাকালে বন্ধ হয়েছে গণপরিবহনসহ অনেক কারখানা। গণপরিবহনের ইঞ্জিন থেকে নির্গত ধোঁয়া ও রাস্তায় ওড়া ধূলিকণা কমে যাওয়ায় বায়ুদূষণ কমেছে। এছাড়া আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ থাকাতেও বায়ুদূষণ কম হচ্ছে।
ক্যাপসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারাদেশে গত ১৪ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিধিনিষেধ ঘোষণা করে। বিধিনিষেধ চলাকালে একটি জরিপে দেখা যায়, ১৪-১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বায়ুদূষণের মান ১-৪ এপ্রিল ও ৫-৮ এপ্রিল সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞার সময়ের চেয়ে যথাক্রমে ২২ ও ৩৯ শতাংশ কমেছে।
বিজ্ঞাপন
বর্তমান বিধিনিষেধ চলাকালে প্রতিদিন দুটি করে, এমন ১০টি এলাকায় ক্যাপস আট ঘণ্টা করে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর মান পরিমাপ করে এ তথ্য পেয়েছে। এতে দেখা গেছে, ১৪ এপ্রিল থেকে দিনের কোনো কোনো সময় ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ৭০ ভাগ বায়ুদূষণ কমেছে, সারাদিনের হিসাবে যা প্রায় ৩৯ শতাংশ কমেছে।
প্রতিষ্ঠানটির আরেক গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ১১ ভাগ, ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ ভাগ এবং মার্চ মাসে ২১ ভাগ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেলেও বিধিনিষেধ শুরুর পর বায়ুদূষণ কমেছে।
বিধিনিষেধে বায়ুদূষণ কমার কারণ কী- জানতে চাইলে স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘১৪ তারিখ থেকে বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার পর ঢাকা শহরের যানবাহনের প্রায় ৯৫ ভাগই বন্ধ রয়েছে। কারণ, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের প্রায় ১৫ থেকে ২০ ভাগের উৎস এ শহরের ফিটনেসবিহীন প্রায় পাঁচ লাখ যানবাহন। তাই লকডাউন শুরু হওয়ার পর যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণ করছে না। সেই সঙ্গে রাস্তায় জমে থাকা ও যানবাহনের সঙ্গে উড়তে থাকা ধুলোবালিও অনেক কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরের মোট বায়ুদূষণের প্রায় ২০ থেকে ২৫ ভাগের উৎস হলো অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সমন্বয়হীন ও পরিকল্পনাবিহীন নির্মাণকাজ। বিধিনিষেধের এই সময়ে তাই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ না হওয়ায় বায়ুদূষণ হচ্ছে না। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য পোড়ানো দেখি। লকডাউনের সময় সে বর্জ্যও পোড়ানো হচ্ছে না বলেও বায়ুদূষণ কমছে। মোট বায়ুদূষণের প্রায় ১০ ভাগ কমেছে আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। সার্বিকভাবে যানবাহনের অনুপস্থিতি, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ থাকার কারণেই এই সময়ে আমরা তুলনামূলকভাবে নির্মল বায়ু সেবন করতে পারছি।’
এ বছর ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিলের বায়ুমান তুলনা করে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বায়ুদূষণ কমেছে এক দশমিক আট শতাংশ। ২০১৯ ও ২০১৮ সালের তুলনায় যথাক্রমে এ বছর বায়ুদূষণ কমেছে ১৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ ও চার দশমিক আট শতাংশ। আবার ২০১৭ সালের তুলনায় বায়ুদূষণ কমেছে ৩০ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
এই প্রতিবেদনটি লেখার সময়ও (১৬ এপ্রিল বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিট) সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্বের বায়ুর মান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান-আইকিউএয়ারের তথ্যমতে, বিশ্বের বায়ুদূষণকারী দেশগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ঢাকা শহরের অবস্থান ১১তম। ঢাকায় বর্তমান সূচক হচ্ছে ১০২। প্রথম স্থান দখল করে আছে রাশিয়ার ক্রাস্নোয়ার্স্ক (Krasnoyarsk) শহর। শহরটির মান হচ্ছে ১৭৯। প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের তথ্যমতে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর মধ্যে এখনও বাংলাদেশ এক নম্বর অবস্থানে আছে।
এমএইচএন/আরএইচ/এফআর