রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থানার মুসলিমবাগ এলাকায় বাসার সামনে রাতের অন্ধকারে রমজান আলী ওরফে পেটকাটা রমজানকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে ডিবি পুলিশের সামনে আসে চুরি, মাদক, পরকীয়া ও ভাই হত্যার প্রতিশোধসহ বেশ কয়েকটি ঘটনা।

ভাই হত্যা ও স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার প্রতিশোধ নিতেই রমজানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে দাবি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মনির ওরফে পিচ্চি মনির। চুরি করা অস্ত্র ব্যবহার করে পেট কাটা রমজানকে হত্যা করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় জুয়েল মাহমুদ আপন ওরফে চোর আপন ও রাব্বী নামের দুই পেশাদার চোর স্বর্ণালঙ্কার চুরি করতে গিয়ে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনসহ ২টি পিস্তল চুরি করে নিয়ে আসে। পরে জুয়েলের কাছ থেকে এক হাজার ইয়াবা ও সাত কেজি গাঁজার বিনিময়ে একটি পিস্তল নেন পিচ্চি মনির। এরপর এই অস্ত্র দিয়ে মনির তার আপন ভাইকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

হারুন বলেন, ২০১৭ সালে পিচ্চি মনিরের বড় ভাইকে হত্যা, মনিরের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া ও মাদক নিয়ে রমজানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সব কিছু মিলিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের গত ১৭ অক্টোবর রাতে কামরাঙ্গীচার থানার মুসলিমবাগ এলাকায় রমজানকে গুলিকে হত্যা করেন। হত্যায় পিচ্চি মনিরসহ টাইগার রাব্বি, আলী হোসেন ও সাগর সরাসরি অংশ গ্রহণ করে। 

হত্যার পরে গত ৯ নভেম্বর আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ টাইগার রাব্বি, আলী হোসেন ও সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য, আদালতের জবানবন্দির ভিত্তিতে উঠে আসে এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী পিচ্চি মনির ও চোরা জুয়েল।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, রমজানকে হত্যার ঘটনায় তার বোন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে নেমে একটি অস্ত্রসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। তবে অত্যন্ত কৌশলে আত্মগোপনে ছিলেন পিচ্চি মনির। গ্রেপ্তার এড়াতে পিচ্চি মনির পালিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে। গ্রেপ্তার এড়াতে গোয়েন্দা স্টাইলে ঘুরতে থাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। গতকাল পিচ্চি মনিরকে বান্দরবান থেকে ধরে নিয়ে এসে কামরাঙ্গীরচরের ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।

এ গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে হত্যাকাণ্ডের জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলো। শিগগিরই মামলাটির চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, পিচ্চি মনিরের বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাসহ ২৭টি মামলা রয়েছে। মনিরের সহযোগী জুয়েল মাহমুদ আপন ওরফে চোর আপনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা রয়েছে। সে একজন পেশাদার চোর। এছাড়াও সে জাতীয়তা বাদী কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ দুটি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। 

পিস্তল দুটির লাইসেন্স বা মূল মালিকের সন্ধান মিলেছে কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, যেহেতু হত্যার ব্যবহৃত অস্ত্রসহ পিস্তল ও গুলিসহ সব কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। এখন অস্ত্রের মূল মালিক বা এর লাইসেন্স ছিল কি না সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব।

জেইউ/এমএ