দুই মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি দাবি ছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করা শ্রমিকদের।

এসব দাবি মেনে না নেওয়ায় শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকেই কাজ বন্ধ রাখেন তারা। শনিবারও এসব নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে একসময় সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে পাঁচ শ্রমিক নিহতসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করা শরিফুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দুই মাসের বেতন পাই। এই নিয়ে যারা আমাদের নিয়োগ দিয়েছে তাদের কাছে গেলে বলে এই মাসের ১৪ তারিখ বেতন পরিশোধ করবে। কিন্তু ১৪ তারিখ যাওয়ার পরও বেতনের জন্য গেলেও বেতন পাওয়া যায়নি।  

তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকায় পানি সরবরাহ এবং দুই ঈদের বোনাস দেওয়ার দাবিও করেছিলাম আমরা। কিন্তু যারা আমাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে, তারা এসব বিষয়ে কিছুই বলেনি। গতকালও তারা কিছু বলেনি। এজন্য গতকাল থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। আজকে আবার সকালে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। তখন পুলিশ গিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পাঁচজন প্রতিনিধি পাঠানোর কথা বলে। কিন্তু এরইমধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

শহিদুল ইসলাম নামে আরেক শ্রমিক বলেন, এই কেন্দ্রে আমি দেড় বছর ধরে ১৮ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। এর জন্য ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। অথচ কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। শুক্রবার অর্ধবেলা কাজ করার দাবি জানিয়েছি, এছাড়া ইফতারের সময় এক ঘণ্টার বিরতি চেয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো দাবিই মেনে নেয়নি। এছাড়া আমরা ঈদ বোনাস দাবি করছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের দাবি পূরণ করেনি। উল্টো গুলি করেছে।  

তিনি বলেন, অনেক শ্রমিক দুই থেকে তিন মাসের বকেয়া বেতন পান। কর্তৃপক্ষ ১৪ তারিখ দেওয়ার কথা বললেও আজ পর্যন্ত দেয়নি। এমনকি কোনো কথাও বলেনি শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে।

নাজিম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে চীনের যারা কাজ করে, তারা আমাদের কোনো দাবি শুনতে চায় নি। গতকাল থেকেই দাবি আদায়ে কাজ বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। আজকে শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বৈঠক শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  

বিদ্যুৎকেন্দ্রে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের সাইফুল আলম মাসুদের পিএস আকিজ উদ্দিন সাংবাদিকদের  বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজে শ্রমিক নিয়োগ দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। তারাই শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া পূরণ করে। আগেও যে দাবি করেছিল সবই পূরণ করা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, স্থানীয় রাজনৈতিক একটা গ্রুপ এখানে ইন্ধন দিয়েছে। না হলে শ্রমিকরা লাঠি-রড কোথায় থেকে পাবে। শ্রমিকরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চলমান কাজে ভাঙচুর করেছে এবং গাড়িতে আগুন দিয়েছে বলেও জানান তিনি।  

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি কেন ঘটেছে তা তদন্ত করে বের করার জন্য অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তারপরই ঘটনার প্রকৃত কারণ বলা যাবে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে ১৩২০ মেগাওয়াটের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ চলছে। এর আগে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছিলেন। এস আলম গ্রুপের এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতা করছে চীনের প্রতিষ্ঠান সেপকো ও এইচটিজি।

কেএম/আরএইচ