ট্রেনে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজদের খোঁজে ঢামেকের মর্গের সামনে স্বজনদের ভিড়/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় নিহত চারজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে আনা হয়েছে। পুড়ে অঙ্গার হওয়া এসব মরদেহ এখন চেনার উপায় নেই। এজন্য ডিএনএ পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে স্বজনদের।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে মর্গের সামনে ভিড় জমান স্বজনরা। পুলিশ তাদের লিখিত আবেদন জমা নিচ্ছে।

ঢাকা রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে ৪টি মরদেহ আছে। এখন পর্যন্ত ৪ জন তাদের স্বজনের সন্ধান চেয়ে আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এছাড়া একজন মৌখিকভাবে বলেছেন দেখতে।

সেতাফুর রহমান জানান, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা যাবে না। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে স্বজনদের।

ছেলের ছবি নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন আবু তালহার বাবা আবদুল হক/ছবি ঢাকা পোস্ট

‘একজন মানুষের উচ্চতা ৩/৪ হাত হলেও এরা পুড়ে ২/১ হাত হয়ে গেছে’

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ছেলেকে খুঁজতে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন বাবা আবদুল হক। ফরিদপুর থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রা করেছিলেন আবদুল হকের ছেলে আবু তালহা।

আবদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে (মর্গ) প্রথমে আমাকে মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে দেখেছি। কিন্তু চিনতে পারছি না। একজন মানুষের উচ্চতা ৩/৪ হাত হলেও এদের সবাই পুড়ে ১/২ হাত হয়ে গেছে।

এ কথা বলার সময় ডুকরে কেঁদে ওঠেন আবদুল হক। তিনি বলেন, আমার ছেলে সৈয়দপুরের বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ে। তার বয়স ২৪ বছর। আমাদের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার কালুখালিতে। এখন ফরিদপুরে থাকি।

ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করা আবদুল হক বলেন, আমার ছেলেকে ফরিদপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছি। সে ঢাকা হয়ে সৈয়দপুরে যাবে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি বলেন, ট্রেনে আগুন দেওয়ার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছি। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি, সেখানেও যায়নি। তার শিক্ষকরাও তাকে খুঁজছেন। আমি রাতেই ঢাকা আসি। ঢাকায় এসে প্রথমে যাই মুগদা মেডিকেলে। সেখানে তাকে খুঁজে পাইনি। এরপর শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেও আমার ছেলের খোঁজ পাইনি। তারপর আসি এখানে (ঢাকা মেডিকেল মর্গ)।

‘জানি না আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই’- বলেন আবদুল হক।

নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমিনের খোঁজে মর্গে এসেছেন ফুফা নজরুল ইসলাম এবং চাচাতো ভাই সোহেল রানা/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

এলিনা ইয়াসমিনের খোঁজে ফুফা ও চাচাতো ভাই

এলিনা ইয়াসমিনের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে। স্বামী সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন এবং পাঁচ মাসের ছেলে সন্তান আরফানকে নিয়ে থাকতেন মিরপুরের ৬০ ফিট রোড এলাকায়। ১০ দিন আগে মারা যান এলিনার বাবা।

বাবাকে চিরবিদায় জানাতে শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন গতকাল বেনাপোল এক্সপ্রেসে করে। ট্রেনে আগুন লাগার পর থেকে খোঁজ নেই এলিনা ইয়াসমিনের।

তার খোঁজে মর্গের সামনে এসেছেন ফুফা নজরুল ইসলাম এবং চাচাতো ভাই সোহেল রানা।

নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রেনে করে আমাদের পরিবারের মোট ৬ জন সদস্য ঢাকায় আসছিলেন। এর মধ্যে এলিনা ইয়াসমিনের ৬ মাসের বাচ্চা আরফানও ছিল। এলিনা ছাড়া সবাই বেঁচে ফিরলেও এখনো তার খোঁজ পাচ্ছি না আমরা। এ বিষয়ে আমরা রেলওয়ে পুলিশকে জানিয়েছি।

এলিনার চাচাতো ভাই সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলিনার একটা সমস্যা ছিল। সে অল্পতেই ঘাবড়ে যেত। হতে পারে এজন্যই অন্যরা নেমে যেতে পারলেও এলিনা পারেনি।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আগুনে পুড়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন ৮ জন।

এসএইচআর/এসকেডি