বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সাব-স্টেশন নির্মাণের কাজ না করেই বিল উত্তোলনের মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। শুধু অভিযোগ নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ওই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও মিলেছে। 

কোয়ালিটি পাওয়ার টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে ওই কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের অভিযানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর কমিশন থেকে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা ও টেন্ডার বিধি অনুসারে সম্পান্ন করতে হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেনাকাটা ও উপকেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ এলে দুদক থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর কমিশনের অনুমোদন ক্রমে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে বিটিভি’র কাছে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করা হয়েছে। নথিপত্র সংগ্রহ ও যাচাই-বাচাই শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি ও বিধি অনুসারে কেনাকাটা কাজে অংশ নেয়। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোনো সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করে তাহলে তার ফলাফল ভোগ করতে হবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো চিঠিতে ৮ ধরনের নথিপত্র তলব করা হয়েছে। ওই নথিপত্র আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

চিঠিতে যেসব নথিপত্র তলব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ টেলিভিশনের দেশব্যাপী ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল সম্প্রচার প্রবর্তন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিটিভির বিভিন্ন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রের মেরামত ও সংস্কার কাজের (WD-13 প্যাকেজ) রেকর্ডপত্র।

যেমন-

কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র ভিত্তিক অনুমোদিত প্রাক্কলন, বরাদ্দপত্র ও প্রশাসনিক অনুমোদন।

পত্রিকায় প্রকাশিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি এবং কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র সিডিউল এবং প্রাক্কলিত ব্যয়ের HOPE কর্তৃক অনুমোদিত কপি।

তুলনামূলক বিবরণী ও মূল্যায়ণ কমিটির প্রতিবেদন।

ঠিকাদারের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্র।

বিভিন্ন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে সম্পাদিত কাজের চূড়ান্ত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্তৃক কাজ সম্পাদনের/বিল পরিশোধের প্রত্যয়ন।

বিভিন্ন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রের কাজের বিপরীতে ঠিকাদারকে প্রদত্ত প্রথম থেকে চূড়ান্ত বিলের কপি এবং বিল ও চেক বই রেজিস্ট্রার।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রধান কার্যালয়ের এবং বিভিন্ন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রের কাজের তদারকি এবং বিল প্রদানের সুপারিশকারী প্রকৌশলীর নাম ও ঠিকানা।

লট-৩ (জেনারেটর ক্রয়) এর চুক্তি সংক্রান্ত এবং প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় সকল নথি, দরপত্র সিডিউল, মূল্যায়ন প্রতিবেদনের কপি।

এর আগে ২০২২ সালের ১৫ মে বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক মনির আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপকেন্দ্রের কাজ না করিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেওয়ার মাধ্যমে ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৮৬৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযান চালায় দুদক। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলীর নেতৃত্বে পরিচালিত এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছিল।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ১৪টি উপকেন্দ্রে নতুন ২৫০ কেভিএ সাব-স্টেশন স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন না করায় প্রথমে সম্পূর্ণ বিল প্রদান না করে আংশিক বিল প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক হিসাবে মুনীর আহমেদ দায়িত্ব পাওয়ার পর ঘুষের বিনিময়ে ঠিকাদারকে ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৮৬৫ টাকার বিল দিয়ে দেন। এ ছাড়া আরও কিছু অভিযোগও তোলা হয়। 

আরএম/এনএফ