দেশে ব্যবসা করতে দুর্নীতিকে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী। ৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মানিলন্ডারিং পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। আর আগামী দুই বছর ব্যবসায় জ্বালানি সংকটকে বড় সংকট হিসেবে দেখছেন তারা।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে 'বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২৩ : উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফল' শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এতথ্য তুলে ধরা হয়।

জরিপের ফল তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এসময় উপস্থিত ছিলেন গবেষণা সহযোগী নিশাত তাসনিম আনিকা ও জেবুন্নেসা। 

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ১১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই জরিপে ১১ হাজার মানুষ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। জরিপে কোভিড ও যুদ্ধ পরবর্তীতে বিশ্ব কীভাবে চলবে, অর্থ বৈষম্য সহায়তা ও সাহায্য কীভাবে অব্যাহত থাকবে তাও জানার চেষ্টা করা হয়। এই জরিপে এমুহূর্তে ভবিষ্যতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জরিপে উদ্ভাবনী, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই উন্নয়ন ও সহনশীলতার সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে প্রবৃদ্ধি। পাশাপাশি মানবসম্পদ, শারীরিক ও টেকনিক্যাল স্কিল, অর্থ, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত কৌশল, প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়কে দেখা হয়েছে।

গবেষণায় গত বছরের মে মাস থেকে জুলাই, ঢাকা, গাজীপুর ও সাভার এলাকার ৭১ জন বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ২৯.৫৮ শতাংশ, মধ্যমমানের ব্যবসায়ী ৩৫.২১ শতাংশ ও বড় ব্যবসায়ী ৩৫.২১ শতাংশ। ব্যবসা খাতের মধ্যে কৃষি সংক্রান্ত ২.৮২ শতাংশ, শিল্প ও তৈরিকারক ২২.৫৪ শতাংশ। নন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৯.৮৬ ও সেবাখাতের ৬৪.৭৯ শতাংশকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, এশিয়ায় ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম সব সূচকে বাংলাদেশের ওপরে। ইনক্লুসিভ অর্থনীতি থাইল্যান্ডের। তবে বাংলাদেশ টেকসই সূচকে একটু উপরে রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার বিবেচনাতেও বাংলাদেশ এগিয়ে নেই। তবে টেকসই অর্থনীতি বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের পরই বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের পারফর্ম ভালো বলা যাবে না। স্কুল শিক্ষায় নেপাল অনেক এগিয়ে। ডেল্টা প্ল্যান থাকলেও বাস্তবায়নে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসায় ২০২৩ সালে প্রতিবন্ধকতা বা প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল দুর্নীতি। ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী এ মত দিয়েছেন। সরকারি প্রশাসনকে মানবমুখি করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি মনে করেন ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। 

বৈদেশিক মুদ্রার অচলাবস্থাকে তৃতীয় প্রধান বাধা মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মানে এই না অন্যান্য সমস্যা বা বাধা কমে গেছে। তবে ইতিবাচক হলো অবকাঠামো সমস্যা কমে এসেছে। 

তিনি বলেন, ৬৬.২০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন আগামী দুই বছর জ্বালানি সংকটে ভুগবে ব্যবসায়ীরা। তারা এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বারবার বললেও সেটা যথাযথভাবে আমলে নেয়নি সরকার। বৈশ্বিকভাবেই জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে এলএনজি আমদানি বড় সংকট তৈরি করেছে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত জ্বালানি সংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বিবেচনায় প্রাধান্য দেওয়া। 

৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন ব্যাংকিং খাতে নজরদারি ও তদারকির অভাব রয়েছে। ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন ডলার সংকটের কারণে তারা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। 

৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, ২০২৩ সালে উৎপাদন বা সেলসের পতন হয়েছে। ৪২ শতাংশ ব্যবসায়ী ব্যবসায় কোনো পরিবর্তন দেখছেন না, স্থিতাবস্থায় আছেন। তবে মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী পরিবর্তন দেখছেন। সুতরাং প্রবৃদ্ধি বা লাভের মুখ সবাই দেখছেন না, এটা স্পষ্ট। ৩৫ শতাংশ ক্ষুদ্র, ২৪ শতাংশ বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা ভালো পরিস্থিতিতে নেই বলছেন।

জেইউ/জেডএস