দেশের দ্রুতগতির বিদ্যুৎ চালিত গণপরিবহন মেট্রোরেলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেবা দেওয়া শুরু করেছে। বর্তমানে মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর একটি প্রান্ত মতিঝিল এবং অপর প্রান্ত উত্তরায় হওয়ায় এই পথের কর্মজীবীরা যাত্রাপথে এ পরিবহনকে বেছে নিয়েছেন।

গতকাল (২০ জানুয়ারি) থেকে মেট্রোরেল চলাচলের সময় বৃদ্ধি করে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত করা হয়েছে। টানা ১৩ ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচলের দ্বিতীয় দিন আজ।

রোববার বিকেলে মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, অফিসের ছুটি শেষে ব্যাগ হাতে অনেকেই প্রবেশ করছেন স্টেশনে। পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে ঢুকছেন কর্মজীবী নারীরাও। শুধু কর্মজীবী নয়, এর পাশাপাশি মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের আশপাশে যাদের গন্তব্য তারাও এই বাহনটিতে উঠছেন।

মেট্রোরেল স্টেশনের কনকর্ড প্লাজায় টিকেট কাউন্টারে রয়েছে শত শত মানুষের ভিড়। কেউ টিকেট সংগ্রহ করছেন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবার কেউ টিকিট সংগ্রহ করছেন টিকিট অফিস মেশিন (টম) থেকে। টম অফিসের লাইনে অন্তত দুই শতাধিক যাত্রী দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন।

টিকিট ভেন্ডিং মেশিনগুলোর (টিভিএম) সামনেও শতাধিক মানুষের সারি রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই স্বয়ংক্রিয় মেশিনগুলো নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। ফলে টিকিট সংগ্রহ করতে লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এদিন প্লাটফর্ম ঘুরে দেখেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এবং মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানি ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। কথা বলে জানা যায়, যাত্রীদের ট্রেনে চড়তে কোন অসুবিধা হচ্ছে কি না, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন তারা।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইশরাত জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আজ প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়ে অফিস শেষে শেওড়াপাড়ায় বাসায় যাব। আগে নিয়মিত অফিসের স্টাফ বাসে যেতাম। সে সময় অন্তত দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন যেতে ১৭-১৮ মিনিটের মতো সময় লাগবে। যানজটের শহরে মেট্রোরেল ভোগান্তি কমিয়েছে।

আরেক যাত্রী আসাদ আবেদীন জয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসা মিরপুরে। অফিসের কাজে প্রতিদিন তোপখানা রোড এলাকায় যেতে হয়। এই পথে প্রতিদিন আমাকে ৪ ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হতো। যখন মেট্রোরেল প্রথম মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলো তখন প্রথম ট্রিপে আমি কাজে আসতে পারতাম। কিন্তু যাওয়ার সময় আমাকে আগের মতোই দুই ঘণ্টা অতিবাহিত করতে হতো বাসে। গতকাল থেকে পুরোদমে চালু হওয়ায় যেতে-আসতে মাত্র ৪০ মিনিট সময় লাগছে। সত্যি কথা বলতে মেট্রোরেলের সুবাদে আমি এই সুবিধা পাচ্ছি।

মেট্রোরেলের নতুন সময়সূচি

নতুন সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল শুরু করেছে মেট্রোরেল। সকাল ৭টা ১০ এবং ৭টা ২০ মিনিটে দুটি ট্রেন উত্তরা থেকে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। যাদের এমআরটি পাস ও র‍্যাপিড পাস ছিল তারা সবগুলো স্টেশন থেকে সকালে ভ্রমণ করতে পেরেছেন। এছাড়া মতিঝিল স্টেশন থেকে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ট্রেন উত্তরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এখন থেকে শুক্রবার বাদ দিয়ে প্রতিদিন রাত ৮টা পর্যন্ত নির্ধারিত হেডওয়েতে মেট্রো ট্রেন চলাচল করবে।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক জানান, রাত ৮টা ১০ মিনিট, রাত ৮টা ২০ মিনিট, রাত ৮টা ৩০ মিনিট এবং রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চারটি ট্রেন মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে প্রতিটি স্টেশনে থেমে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত চলবে। এই মেট্রো ট্রেন চারটিতে শুধু এমআরটি পাস, র‍্যাপিড পাস এবং ভ্রমণের দিন রাত ৭টা ৪৫ মিনিটের আগে ক্রয় করা সিঙ্গেল জার্নি টিকিটধারী যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারবেন। রাত ৭টা ৪৫ মিনিটের পর সব টিকিট বিক্রয় অফিস এবং টিকিট বিক্রয় মেশিন বন্ধ হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হেডওয়েতে সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পিক আওয়ারে ১০ মিনিট, বেলা ১১টা ৩১ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অফপিক আওয়ারে হেডওয়ে ১২ মিনিট এবং বিকেল ৪টা ১ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পিক আওয়ারে হেডওয়ে ১০ মিনিট।

এছাড়া সব মেট্রোরেল স্টেশন থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে রাত ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এমআরটি পাস ক্রয় ও টপআপ করা যাবে। ওয়েবসাইট অথবা মেট্রোরেল স্টেশন থেকে এমআরটি পাস নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করে যথাযথভাবে পূরণ করে চালু যে কোনো মেট্রোরেল স্টেশন থেকে পাস ক্রয় করা যাবে।

উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল- এ ১৬ স্টেশনে মেট্রো ট্রেন চলাচল করছে। কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলমান। ওই অংশের কাজ শেষ হলে কমলাপুরও যাবে মেট্রো ট্রেন।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। ২৯ ডিসেম্বর থেকে সর্বসাধারণ মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন। 

এমএইচএন/এমজে