চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর পোর্ট কানেক্টিং সড়কের পাশে একসময় ছিল মাদকের আস্তানা। গত বছরের শুরুতে সেখানে বেহাত হওয়া ১৯৪ একর সরকারি জায়গা উদ্ধার করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। বঙ্গোপসাগরের পাড়ে উদ্ধার হওয়া সেই জায়গায় গড়ে তোলা হয় 'চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক'। বর্তমানে সেখানে সুবাস ছড়াচ্ছে ১২৭ প্রজাতির কয়েক লাখ ফুল।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) মাসব্যাপী ফুল উৎসব উদ্বোধন করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। ‘ফুলের মতো আপনি ফুটাও গান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই উৎসব চলবে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

উদ্বোধনকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে পর্যটনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ফুল উৎসবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা চেতনাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে। সামনের প্রজন্ম এর জন্য আমাদেরই পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে অন্যান্য জেলা প্রশাসকদের এই ধরনের আয়োজন করার জন্য আহ্ববান জানাচ্ছি।

এসময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন মাদকের আখড়া থেকে ফুলের বাগানে রূপান্তর করায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী পর্যটনকে কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক বিকাশে ভূমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি এই উদ্যোগ যেন ক্ষণিকের উদ্যোগ না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে সেই আহ্বানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য বলেন। এছাড়া বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করার কথাও উল্লেখ করেন।

এসময় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ডিসি পার্ক, নৌকা জাদুঘর, পর্যটন বাস ও ফুল ডে ট্যুর, স্কুল বাস, বার্ড পার্ক এই ৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। চট্টগ্রামের প্রতি উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ করার মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকারি জমি উদ্ধার করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন জানায়, এটি চট্টগ্রামের দ্বিতীয় ফুল উৎসব। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, চেরী, জাকারান্ডা, উইলো, উইস্টেরিয়াসহ নানা প্রজাতির দেশি- বিদেশি ১২৭ প্রজাতির কয়েক লাখ ফুলের সমারোহে ইতোমধ্যে সেজেছে ডিসি পার্ক। দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে নেদারল্যান্ডস থেকে আনা বাল্বের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ফুটানো সাড়ে পাঁচ হাজার টিউলিপ। এসব ফুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেক প্রজাতির ফুলের পাশেই লেখা থাকবে তাদের নাম ও বৃত্তান্ত। মাসব্যাপী এ আয়োজনকে আরো আকর্ষণীয় করতে ফুলের প্রদর্শনীর পাশাপাশি কয়েকটি সেলফি জোন তৈরি করা হয়েছে।

এ উৎসবকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটকদের জন্য থাকবে সাম্পান বাইচের আয়োজন। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার্থে থাকবে বিভিন্ন সময়ের ১৫টি নৌকা প্রদর্শনী। চট্টগ্রাম জেলার চিত্রশিল্পীদের প্রায় ২০০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর জন্য থাকবে। আগত দর্শনার্থীদের নিজেদের ছবির ক্যারিকেচার আঁকার ব্যবস্থা থাকবে। বিনোদন প্রেমীদের জন্য থাকবে সানসেট ভিউ পয়েন্ট, পিজিওন কর্নার,  স্যুভেনির শপ, দিঘীতে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা, লোনা পানির ঝর্না। আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ট্যুরিস্ট শেড, নামাজের ব্যবস্থা, বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টলসহ পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকবে।

শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, দোলনা, স্প্রিং টয়, মেরিগো রাউন্ড, দোলনা, প্লে পেন, ফুট ট্রাম্পোলাইনসহ থাকবে নানা আয়োজন। পুরো ফুল উৎসবকে ঝাঁকজমকপূর্ণ করতে আয়োজন করা হবে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির অংশগ্রহণে মাল্টি কালচারাল বিশেষ আয়োজন, ঘুড়ি উৎসব, ফায়ার ওয়ার্কস, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, জাদু প্রদর্শনী। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকবে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

গত বছরের ৪ জানুয়ারি সলিমপুরে মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দিয়ে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ১৯৪ একর খাস জায়গা উদ্ধার করে। এরপর সেখানে একমাসের মধ্যে ৯ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী চট্টগ্রামে প্রথম ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়। সে সময় ১২২ প্রজাতির ফুলের চমকপ্রদ প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছিল ফুল উৎসব-২০২৩। দশদিন ব্যাপী এ ফুল উৎসবে প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন ডিসি পার্ক।

এমআর/এসএম