অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহের স্রোত ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোর প্রতি অভিবাসীদের আস্থা বাড়াতে হবে। কেননা এটি সম্ভব না হলে বিদেশ থেকে টাকা আনার ক্ষেত্রগুলো পুরোপুরি হুন্ডির কাছে চলে যাবে। এতে করে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২৩ অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তাসনিম সিদ্দিকী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০২৩ সাল জাতীয় নির্বাচনপূর্ব বছর হওয়ায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে এটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ বছর। বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন বাংলাদেশি কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন। যা গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে ১১ লাখ ৩৫ হাজর ৮৭৩ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪৮ বছরের মধ্যে এ বছর বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ অভিবাসন হয়েছে।

তাসনিম সিদ্দিকী আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশের অভিবাসন খাত হুমকির মধ্যে পড়েছিল। তবে ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। করোনা মহামারির সময় যেসব অভিবাসী বিদেশে যেতে পারেননি, ২০২২ ও ২০২৩ সালে তারা অভিবাসন করেছেন। এছাড়াও কোভিড-১৯ এর পরে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য অভিবাসী গ্রহণকারী দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হওয়ায় চাকরির বাজারও উন্মুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের সৌদি প্রতিষ্ঠানে অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নির্ধারিত কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার ফলে অভিবাসন বেড়েছে। তবে শুধু বাংলাদেশ থেকে নয় প্রতিটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ থেকেই ২০২২ সাল থেকে অভিবাসন বেড়ে চলেছে।

২০২৩ সালে মোট ৭৬ হাজার ৫১৯ জন নারী কর্মী কাজের জন্য বিদেশে গেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় নারী অভিবাসন প্রবাহ এই বছর ২৭.৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ বছরে মোট আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ৫.৮৬ শতাংশ হলেন নারী কর্মী যা গতবছর ছিল ৯.৩ শতাংশ। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রেও নারী অভিবাসন ৩.৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়াও বিগত বছরের প্রবণতা অনুযায়ী ২০২৩ সালেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে অভিবাসন করেছেন ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন যা মোট অভিবাসনের ৩৮.১২ শতাংশ।

এসময় তিনি ৬টি সুপারিশও তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে-

১. ২০২৫-২০৩৫ সালকে অভিবাসন দশক ঘোষণা করা হোক।

২. শ্রম অভিবাসন এবং ডায়াস্পোরার জন্য দুইটি দিবস পালন না করে সব অভিবাসীর জন্য জাতিসংঘ ঘোষিত ১৮ ডিসেম্বরকেই সব অভিবাসীর দিবস হিসেবে পালন করা হোক। ১৮ ডিসেম্বর পালনকে ‘গ’ তালিকাভুক্ত করার বদলে ‘খ’ তালিকাভুক্ত করা হোক।

৩. রাজনৈতিক ইশতেহারে অভিবাসীদের বিষয়ে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে তার জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করা হোক।

৪. অনলাইনে অভিযোগের যে ব্যবস্থা দীর্ঘকাল ধরে চালু ছিল তা দ্রুত ফিরিয়ে আনা হোক।

৫. আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জলবায়ু অভিযোজনের পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জলবায়ু বিষয়ক ফান্ডগুলো হতে বিশেষ ঋণ প্রকল্প গ্রহণ করা হোক।

৬. রেমিট্যান্স প্রবাহের স্রোত ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোর প্রতি অভিবাসীদের আস্থা বাড়াতে হবে। স্বল্পমেয়াদি অভিবাসীদের বিভিন্ন বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে হবে এবং তা গণমাধ্যমে ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা। এসসয় আরও উপস্থিত ছিলেন রামরুর পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেরিনা সুলতানা, প্রজেক্ট ম্যানেজার রাবেয়া নাছরীন এবং প্রজেক্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ ইনজামুল হক।

আরএইচটি/পিএইচ