প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, আয়কর ফাঁকি দিয়ে অনেক বিদেশি নাগরিক এ-থ্রি ভিসা, বি-ভিসা কিংবা টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা এক প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজে এসে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে প্রণীত ভিসা নীতিমালায় কর্মানুমতি গ্রহণের শর্ত না থাকায় অনেকে আবার কর্মানুমতি না নিয়ে কিংবা ভিসার মেয়াদ না থাকায় বা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বছরের পর বছর কাজ করে মাত্র ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমরা দৈনিক ও প্রগ্রেসিভ হারে জরিমানার বিধান আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই সঙ্গে কর্মানুমতি থাকা সাপেক্ষে বিদেশি নাগরিকরা যদি অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চায় তাহলে নির্ধারিত ফি প্রদান করে সেই প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। সেক্ষেত্রে তার নিজ দেশে গিয়ে পুনরায় ভিসা করার দরকার পড়বে না।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত কর্মানুমতি ব্যতীত বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি প্রকর্মী/নাগরিকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব।

মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, কর্মানুমতিসহ ভিসা জটিলতা দূর করার জন্য বিদেশি নাগরিকরা বিভিন্ন দেশ থেকে ভিসার আবেদন করতে পারবে। বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূতরা অনলাইনের মাধ্যমে সে ভিসার আবেদন আমাদের স্পেশাল ব্রাঞ্চে প্রেরণ করবেন এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ সাত দিনের মধ্য ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করবে।

তিনি বলেন, ওয়ার্ক পারমিট না নিয়ে কাজ করায় সরকার একদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী কোনো বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করে কাজ করলে আয়কর প্রদান ও কর্মানুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক, সেহেতু এটা অপরাধ। সেইসঙ্গে আমরা দেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আবেদন রাখতে চাই, যোগ্যতা সম্পন্ন জনবল বাংলাদেশেই রয়েছে তাদের রিপ্লেসমেন্টে যেন বিদেশি কর্মী না আনা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অনেক বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। সেটি দূর করার জন্য আমরা  তাৎক্ষণিক তথ্যপ্রাপ্তি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিডা, বেপজা, বেজা, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, এনএসআই, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রবেশ যোগ্যতা সম্পন্ন একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন ইন্টারঅপারেবল ডাটা সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে এক প্রতিষ্ঠানের তথ্য অন্য প্রতিষ্ঠান সহজেই অ্যাকসেস করতে পারে। এর ফলে বিদেশি নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য সহজেই পাওয়া সম্ভব হবে। যার ফলে বাংলাদেশ অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য রেগুলারাইজড হবে, সেইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ওপর সহজেই নজরদারি করা যাবে।

সভায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, কর্মানুমতি ব্যতীত বিদেশি নাগরিকদের দেশে কাজ করার ফলে তাদের অর্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে ক্রমান্বয়ে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদেশি নাগরিকদের নিয়ম মেনে বাংলাদেশে কাজ করতে হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ।

ওএফএ/এসএসএইচ