বিকেল গড়াতেই অমর একুশে বইমেলায় ঢল নামে দর্শনার্থীদের। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা আর নানা বয়সী মানুষের সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয় পুরো প্রাঙ্গণজুড়ে। তবে, এর মাঝেও লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে দেখা গেল অদ্ভুত এক শূন্যতার। মেলার অন্যান্য স্থানে দর্শনার্থীদের বেশ সমাগম থাকলেও এ চত্বর পুরোটাই ফাঁকা। সবার কাছে এটি লিটলম্যাগ চত্বর নামে বেশি পরিচিত।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি হলেও একেবারেই উল্টো চিত্র পার্শ্ববর্তী লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের। মানুষজন না থাকার কারণে অবসর সময় পার করছেন  স্টলের দায়িত্বে থাকা বিক্রয় কর্মীরা। কেউ গল্প করছেন অন্যান্যদের সঙ্গে, কেউ আবার বসে আছেন বিরস মুখে। কেউবা মাথা এলিয়ে দিয়েছেন টেবিলের ওপর।

যদিও বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, বরাবরই এমন পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত তারা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এই চত্বরে শুধুমাত্র একজন লেখকের ব্যক্তিগত বই থাকে৷ তাই হয়ত মানুষের আগ্রহ কম। তবে, স্টলের ব্যবস্থাপনা নিয়েও তাদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

দোলন প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আফরোজা আক্তার বলেন, আমাদের স্টলে ১৪টি বই আছে। কোনো বিক্রি নেই। আমাদের কাজ শুধুমাত্র বসে থাকা। লোকজন এই চত্বরে কম আসে। তেমন বিক্রি হয় না বললেই চলে।

ভিন্নচোখ প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আবির বলেন, আমি বইমেলার শুরু থেকেই এখানে দায়িত্ব পালন করছি। আজকে একটি বইও বিক্রি হয়নি। এমনিতে এখানে ক্রেতা কম আসে। সবাই আসা যাওয়ার কাজে এই চত্বরের পথ ব্যবহার করেন।

নান্দনিক প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী সুদীপ্ত মাহমুদ বলেন, বিক্রি কম। ক্রেতাও আসে না। আজকে মেলা শুরুর পর থেকে একটি বইও বিক্রি হয়নি। আমাদের স্টলে ৩০টির মতো বই আছে। ক্রেতার পরিমাণ কম হওয়ার কারণে অলস সময় পার করতে হচ্ছে।

লোক প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি ইশিতা চাকমা বলেন, শুক্রবার ও শনিবার বইয়ের বিক্রি বেশি হয়। আজ এখানে লোকজন তেমন আসেননি। এখন পর্যন্ত একটি বইও বিক্রি হয়নি। অবশ্য এই জায়গাটি একেবারেই দর্শনার্থীদের জন্য উপযোগী নয়।

জলছবির সহ-সম্পাদক মেসবাহ মুকুল বলেন, এখানে ক্রেতা খুবই কম। বিক্রি নেই। আর আমাদের স্টল করেছে গাছের তলায়। আজকে মাত্র দুইটা বই বিক্রি হয়েছে। এখানকার বিন্যাসটা দর্শনার্থীদের জন্য উপযোগী নয়।

মেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থীরাও বলছেন, বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর অনেকটাই নিষ্প্রভ। মানুষের উপস্থিতি না থাকার কারণে অনেকটা ভিন্ন অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

মিতুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছি, তখনকার মেলায় এই লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সবচেয়ে জমজমাট ছিল। এখন তেমনটি নেই। এই অবস্থা দেখে খুব কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে একই জায়গায় ভিন্ন দুটি রূপ। একপাশে ভিড় আছে, অন্য পাশে একেবারে শূন্য। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল বিষয়গুলো নজরে নিয়ে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া। এক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্টলগুলোর বিন্যাস করা যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আরএইচটি/কেএ