অলস সময় পার করছেন পরিবহন শ্রমিকরা

বুধবার দুপুর একটা। চট্টগ্রামের কদমতলী বাস টার্মিনাল। চারদিকে নীরবতা। আন্তঃজেলা এই বাস টার্মিনালে যাত্রী নেই, নেই গণপরিবহন শ্রমিকদের হাঁকডাক। নেই তাদের ব্যস্ততা। চারদিকে তাদের উপস্থিতিও খুব একটা নেই।   

করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে চলছে বিধিনিষেধ। বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল। আর তাই ব্যস্ততা নেই গণপরিবহন শ্রমিকদের। আয় না থাকায় চরম সংকটে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বিশেষ করে যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাস শ্রমিকরা রয়েছেন বিপাকে। 

কদমতলী বাস টার্মিনালে বসে অলস সময় পার করছেন নীলাচল বাসের সুপারভাইজার রাসেল মিয়া। ব্যস্ততা না থাকায় তিনি কথা বললেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবহনের সঙ্গে আমরা যারা জড়িত, তারা গাড়ির চাকা ঘুরলেই চলতে পারি। নইলে না। দিন এনে দিনে খাই আমরা। একেকটি গাড়ির আয়ের সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ জন জড়িত। পরিবারে মা, বাবা ছেলেসহ পাঁচজন সদস্য রয়েছে আমার। তাদের সবকিছু আমাকে বহন করতে হয়। বাড়ির মালিক ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কী করব বুঝতে পারছি না। সরকার বা পরিবহন সংশ্লিষ্ট কেউ সাহায্য-সহযোগিতা করেনি এখনো। শুধু রাসেল মিয়া নন, চট্টগ্রামে গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার মানুষ এমন সংকটে রয়েছেন।

বাস টার্মিনালে কথা হয় বাধন পরিবহনচালক কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা গাড়ির চাকা ঘুরলে বেতন পাই। লকডাউনের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে আয়ের পথও বন্ধ। পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকার থেকে এ পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি।  মনে হচ্ছে করোনায় নয়, না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।

মোহাম্মদ শিপন নামে আরেক চালক বলেন, সবকিছুই তো চলছে, শুধুমাত্র বাস বন্ধ রয়েছে। আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ছয়জনের পরিবার নিয়ে মাদারবাড়ী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। এই মাসের বাড়িভাড়া দিতে পারি নাই। বাড়িওয়ালা ভাড়া চাচ্ছেন। ধার-দেনা করে কোনোভাবে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি। পরিবহন বন্ধ থাকলে সামনে কেউ ধারও দেবে না। সরকার যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয়, তাহলে বেঁচে থাকতে পারব। মালিক বা সরকার কেউই আমাদের খোঁজ নেয় না। 

কদমতলী বাস টার্মিনালে কথা হয় চট্টগ্রাম-কুমিল্লা চলাচলকারী গাড়ির হেলপার জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, দৈনিক বেতনে কাজ করি আমরা। দিনে এনে দিনে খাই। কয়েকদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ। তাই বেতনও বন্ধ। বাড়ি থেকে টাকা চেয়ে পরিবারের সদস্যরা ফোন দিচ্ছে, কিন্তু দিতে পারিনি।  

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলের কার্যকরী সভাপতি মৃণাল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে  বলেন, যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সি কিংবা লেগুনায় কর্মরত চালক ও হেলপাররা কেউ মাসিক বেতনে চাকরি করেন না। তারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করেন। যতক্ষণ ডিউটি করেন, ততক্ষণ কমিশনের টাকা পান। ডিউটি না করলে টাকা পান না। ট্যাক্সির অধিকাংশ চালক দৈনিক ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে থাকেন। বিধিনিষেধের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই শোচনীয় অবস্থায় আছেন। তারা না পারছেন কাউকে বলতে, না পারছেন সইতে। এখন পর্যন্ত পরিবহন শ্রমিকরা সরকারি কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাননি।

বিধিনিষেধ চলাকালীন শ্রমিকদের সরকারি সহযোগিতা দেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার সারা দেশে শ্রমিকদের মানববন্ধন করার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।  
 
কেএম/আরএইচ