অতিরিক্ত অ্যালকোহল (মদ) পান করায় পরিবেশ অধিদপ্তরের (ঢাকা অঞ্চল) পরিচালক সৈয়দ নজমুল আহসান ও তার স্ত্রী নাহিদ বিনতে আলমের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশের প্রস্তুত করা সুরতহাল প্রতিবেদনের কপি ঢাকা পোস্টের সংগ্রহে রয়েছে। মৃতদের পরিবার সূত্রেও এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও কথা বলতে নারাজ। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে মিরপুর মডেল থানায়।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর কারণ যাই হোক সেটার অফিসিয়াল প্রমাণ ময়না তদন্তের প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদন পেলেই বোঝা যাবে কেন তাদের মৃত্যু হয়েছিল।

অপমৃত্যুর মামলার ও পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুবরণ করা পরিবেশ অধিদপ্তরের (ঢাকা অঞ্চল) পরিচালক সৈয়দ নজমুল আহসানের গ্রামের বাড়ি মাগুরা সদরের পুকুরিয়ায়। সৈয়দ নজমুল আহসান ১৯৯৬ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। ‍তিনি রাজধানীর মিরপুর-২ সরকারি অফিসার্স কমপ্লেক্সের দুই নং ভবনের বি-৮ ফ্ল্যাটে সপরিবারে থাকতেন।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সী সাব্বির আহমেদ বলেন, গতকাল বুধবার মিরপুর-২ অফিসার্স কমপ্লেক্সে বাসায় স্বামী-স্ত্রী উভয় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পরিবারের লোকজন নজমুল আহসানকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে আমরা মরদেহ বুঝে পাই।

‘একই সময়ে অসুস্থ স্ত্রী নাহিদ বিনতে আলমকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে মারা যান।’

তিনি বলেন, সৈয়দ নজমুল আহসান পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক ছিলেন। তাদের কী কারণে মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সুরতহালে সে তথ্য উল্লেখ করেছে কি না বা কোনো আলামত বা প্রমাণ পেয়েছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানাব।

তবে পুলিশের প্রস্তুত করা সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবুও মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়। সুরতহালে ভাই সৈয়দ আবুল হাসনাতকে মরদেহ শনাক্তকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরতহালকালে মৃতের শরীরে ছিল চেক লুঙ্গি ও গায়ে ছিল হালকা বেগুনী রঙের হাফ পলো শার্ট। সুরতহাল অনুযায়ী, মৃত সৈয়দ নজমুল আহসানের উভয় চোখ অর্ধখোলা দেখেছে পুলিশ।

অন্যদিকে নজমুলের স্ত্রী নাহিদ বিনতে আলমের মৃত্যুও মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে হয়েছে বলে জানা গেছে। পেশায় গৃহিনী নাহিদ বিনতে আলম স্বামীর সঙ্গেই থাকতেন মিরপুর-২ সরকারি অফিসার্স কোয়াটারে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর প্রথমে উভয়কে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে নাহিদ বিনতে আলমের জন্য আইসিইউ সাজেস্ট করেছিল কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু সেখানে তা খালি না হাওয়ায় পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

সেখান থেকে প্রদানকৃত মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আইসিইউও-১ এ চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে সেখানে ভর্তি করা হয় ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ৭টা ২০ মিনিটে। আর তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মারা যান।

মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্রে রোগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অতিরিক্ত মাদক সেবনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।। মতামতেও তাই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, কারডিয়াক অ্যারেস্ট। এটার মূল কারণ হিসেবে পুলিশ বলছে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন।

এদিকে মারা যাওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের (ঢাকা অঞ্চল) পরিচালক সৈয়দ নজমুল আহসান ও তার স্ত্রী নাহিদ বিনতে আলমের পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কেউ এপ্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাহিদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার নিকট আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। সে তথ্য পুলিশ উল্লেখ করেছে নাহিদ বিনতে আলমের সুরতহালে প্রতিবেদনে।

থানা পুলিশ জানিয়েছে, ময়না তদন্তের পর পরিবারের নিকট মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অ্যালকোহল তারা কোথায় পান করেছেন সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে তারা কিন্তু বাসায় অসুস্থ হয়েছে পড়েছিলেন। এরপর পরিবারের লোকজনই তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়। উভয়ের মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। মৃত দম্পতির মরদেহের ময়না তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। একই ঘটনায় পৃথকভাবে পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে মৃত্যুর বিষয়ে আইনি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া এ ব্যাপারে কথা বলা ঠিক হবে না।

অন্যদিকে সৈয়দ নজমুল আহসানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। আজ (বৃহস্পতিবার) পৃথক পৃথক শোকবার্তায় তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোকবার্তায় পরিবেশমন্ত্রী বলেন, নাজমুল আহসান পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের বায়ুমান শাখার পরিচালক পদে কর্মরত থাকাকালীন দেশের বায়ুমানের উন্নয়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছেন। তার মতো একজন সদালাপী কর্মকর্তার অকাল মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

জেইউ/এমএ