গত এক দশক ধরে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের গল্প তুলে ধরা এবং নির্যাতনের ঘটনা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’।

গতকাল শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এই মানবাধিকার সংগঠনটি। সোচ্চারের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সংগঠনটির আরেক নির্বাহী পরিচালক রাহনুমা সিদ্দিকি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগঠনটির রিসার্চ অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিরেক্টর শিব্বির আহমেদের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন।

শিব্বির আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাসে নির্যাতিতদের না বলা গল্পগুলো নীরবতা ভেঙে আমরা সামনে নিয়ে আসতে চাই এবং তাদের গল্পগুলো আমরা শেয়ার করতে চাই। গত এক দশক ধরে কিংবা তারও আগে যারা নির্যাতিত হয়েছে তাদের গল্পগুলো আমরা সোচ্চারে প্রকাশ করব।

তিনি বলেন, একইসঙ্গে আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করব। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন না একদিন এসব ঘটনার বিচার পাবে নির্যাতিতরা।

শিব্বির আহমেদ আরও বলেন, যদিও সংগঠনটির কাজের পরিধি আরও বড়। তবে প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাস টর্চারের ভিকটিমদের পাশে দাঁড়ানো, টর্চার বন্ধে অ্যাডভোকেসি করা এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই সংগঠনটির পথ চলার সূচনা হচ্ছে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমি বুয়েটে আবরার ফাহাদের মৃত্যুসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছি। এটা আমাকে এত বেশি বিমূঢ় করেছে। সোচ্চারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ‘সারা পৃথিবীতে কোন রাষ্ট্রে এমন বর্বর ঘটনা ঘটে না। সারা পৃথিবীতে যত ছাত্র সংগঠন আছে তারা এভাবে অপারেট করে না।’ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা পড়ে তারা দেশকে গড়ে তুলবে। এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে, যাতে কেউ প্রতিবাদ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করে. তারা হলে আসন সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে কাজগুলো করে থাকে। 

তিনি বলেন, এই দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয় কিন্তু এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি আসন সমৃদ্ধ হল নির্মাণ করার ক্ষমতা সরকারের নেই। এসব খাতে সরকার টাকা ব্যয় করে না। তারা এটা করতে চায় না। আবাসিক সংকট থাকার কারণে যারা একটু অসচ্ছল পরিবার থেকে পড়তে আসে তারা বাধ্য হয়ে তাদের দাসত্ব গ্রহণ করে। এমন একটি সংস্থার মাধ্যমে যদি সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরিত্রাণ পায় তবে সবাই এটাকে সাধুবাদ জানাবে। 

জুম অনলাইন মিটিংয়ে বুয়েটের নিহত আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতিত শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদসহ ক্যাম্পাসে নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

কেএইচ/এসকেডি