ছোট হ্যান্ড মাইকে বাজছে রেকর্ড করা সাহায্যের আবেদন। কেউ নিজের অচল হাত-পা দেখিয়ে প্রকাশ করছেন অসহায়ত্ব, চাইছেন সাহায্য। কেউ সুর করে কোরআন পড়ছেন। কেউবা আবার দান করার মহত্ত্ব জানিয়ে দিচ্ছেন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষদের। আবার মাঝে মধ্যে টাকার ভাগ এবং জায়গার দখল নিয়েও নিজেদের মধ্যেই বেশ ‘গরম’ পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে— এমনই চিত্রই দেখা গেছে আজিমপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে কবরস্থান পর্যন্ত সড়কে। এই সড়কে প্রায় হাজারখানেক ভিক্ষুক সারিবদ্ধভাবে বসেছেন সাহায্যের আশায়।

মূলত, শবে বরাত উপলক্ষ্যে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর থেকেই এই সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লি এবং আজিমপুর কবরস্থানে জিয়ারত করতে আসা মানুষদের সুবিধার জন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এই সুযোগে ফাঁকা দুই সড়কের চারটি সারিতে বসেছেন হাজারখানেক ভিক্ষুক।

স্থানীয় দোকানি ও মুসল্লিরা জানান, আজ সকাল থেকেই এই জায়গার ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে। আগে আসলে আগে পাবেন— ভিত্তিতেই করা হয়েছে দখল। আসলে, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মানুষ এখানে কবর জিয়ারত করতে আসেন। আর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদেও আসেন অসংখ্য মানুষ। সবমিলিয়ে এসব মানুষজনের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশায় এখানে ভিক্ষুকরা এসে উপস্থিত হন।

যদিও এসব বিষয়ে খুব বেশি কথা বলতে নারাজ কোনো ভিক্ষুক। এরপরও শুক্কুর আলী নামের এক ভিক্ষুক বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এবং বস্তি থেকে এখানে মানুষজন এসেছে। এখানে সবাই প্রকৃত ভিক্ষুক না। অনেকেই এখানে সাহায্য পাওয়ার আশায় এসেছেন। সারারাত মানুষের আনাগোনা থাকে বলে মোটামুটি ভালোই টাকা পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।

আজিমপুর কলোনির সামনের রাস্তায় বসে এক নারীকে দেখা যায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে কোরআন পড়তে। তবে, দীর্ঘ সময় তার পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, তিনি একই পৃষ্ঠায় এমনকি একই লাইনেই আঙুল সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

আবার মসজিদের সামনে দান করা টাকা নিয়েও বেশ কয়েকবার ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায় অনেককে। এ সময় মসজিদের খাদেমদের লাঠি নিয়ে তাড়া করে তাদের সরিয়ে দিতেও দেখা যায়।

এদিকে, আজিমপুর কবরস্থানের ভেতরে ভিক্ষুক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করেই ভেতরের ওয়াক ওয়েতে বসে যান অনেকেই। আবার সরু রাস্তায় মানুষের চলাচলের বিঘ্ন ঘটায়। পরবর্তী সময়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীরা তাদেরকে সরিয়ে দিতে উদ্ধত হলে সেখানেও তৈরি হয় গোলমেলে অবস্থার।

তবে, বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে নয় বরং মানবিকভাবেই দেখছেন অধিকাংশ মানুষ। আব্বাস উদ্দিন নামের একজন বলেন, সামর্থ্য অনুযায়ী গরিব এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এখানে যেসব ভিক্ষুক কিংবা সাহায্য প্রত্যাশীরা উপস্থিত হয়েছেন, নিঃসন্দেহে তারা অসহায়। কারো অবস্থা ভালো হলে তো এখানে ভিড় করার কথা নয়। তবে সুশৃঙ্খল অবস্থা বজায় রাখতে আরও বেশি লোকবল এখানে নিয়োগ করা উচিত ছিল।

আরএইচটি/কেএ