ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি নিধন করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজা ভূখণ্ডে তারা খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। গাজায় এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। গাজাবাসীর এক তৃতীয়াংশ জনগণ এই দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ ৭১ এর আয়োজিত ‘মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, গাজার চলমান গণহত্যা ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। 

বক্তারা বলেন, গত ছয় মাস ধরে একদিকে চলছে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যার মহোৎসব, অন্যদিকে পরিকল্পিত ভাবে খাদ্যের অভাব যা বাকিদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছে। এদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব। এ সময় তিনি বলেন, ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় ১৯৪৮ সালে প্রথমবারের বারের মতো ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। কারণ ইহুদি জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ির বানাবার জায়গা দিতে হবে। সে সময়ের যুদ্ধে নতুন করে ৪১ হাজার ৩০০ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হয়। এরপরের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে দুই পক্ষেরই হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধে ইসরায়েল এবং পিএলও বা ফিলিস্তিনের পক্ষে নিহত হয় হাজার মানুষ। এরপর প্রথম ইনতিফাদায় নিহত হয় হাজারো ফিলিস্তিনি এবং বেশ কিছু ইসরায়েলি। দ্বিতীয় ইনতিফাদায় একই ভাবে মারা যায় হাজার সাধারণ মানুষ। ২০০৬ এর গাজা-ইজরায়েল যুদ্ধে মারা যায় কয়েকশত মানুষ। ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধে নিহত হয় দুই হাজারের মতো ফিলিস্তিনি। 

তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যা এখনো চলছে। যুদ্ধে প্রথমদিকে হামাস বা ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে। বেশকিছু ইসরায়েলি লোকজন হামাসের হাতে বন্দি হয়। পশ্চিমা বিশ্ব একযোগে হামাসকে আক্রমণকারী বা সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্ত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে প্রকাশ সমর্থন জানায়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর যে ঐতিহাসিক অবিচার, যে কারণে ফিলিস্তিনিরা আক্রমণ চালাচ্ছে, সে ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নীরব থাকে। আমরা মনে করি, যত দ্রুত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নির্মিত হবে ততই দ্রুত মনুষ্যত্ব রক্ষিত হবে, ততই দ্রুত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরবে। 

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মোহাম্মদ সামাদ বলেন, আজ ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ জুড়ে এতো মিছিল হচ্ছে কিন্তু সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কানেই তুলছে না। আজকে যদি ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুটি রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়াত তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যেত। পৃথিবীতে কিছু আছে রাষ্ট্র, কিছু আছে টেরিটরি। সেই হিসেবে ফিলিস্তিন কোনো রাষ্ট্র নয়। ফিলিস্তিন হচ্ছে একটা টেরিটরি। আর ইসরাইল হচ্ছে একটা রাষ্ট্র। এই ইসরাইল রাষ্ট্রকে সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এটা বাইডেনের অবস্থান দেখেই বুঝা যায়। তিনি একবার বলছেন যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আবার সিকিউরিটি কাউন্সিলে কথা উঠলেই তিনি সেখানে ভেটো দিচ্ছেন। বাইডেনের এই বিচারিতার বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে একত্রিত করতে হবে। 

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সারওয়ার আলী বলেন, গণহত্যার সংজ্ঞা হচ্ছে কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে পুরো দমে নির্মূল করে দেওয়া। আজকে ফিলিস্তিনরা আপন দেশে আপন রাষ্ট্রভূমি থেকে উৎখাত হচ্ছে। তারা নিজ দেশে উদ্বাস্তু হয়ে জীবন যাপন করছে। তাদের অবস্থানটাকে আরও সংকুচিত করার জন্য এই আক্রমণটা এখনো চলছে। এর চাইতে নিষ্ঠুর নির্মম হত্যাকাণ্ড আর হয় না। আজকে বিশ্বের বিবেককে জাগ্রত করা প্রয়োজন। এই চেষ্টাটাই আমাদের করতে হবে।

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল মান্নান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ও সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাবুদ প্রমুখ।

ওএফএ/এসকেডি