‘আমার সোনার কী হইলো! আমার মানিকটা তো ভালোই ছিল। ও কেন হাসপাতালে? আমাকে ওরে একবার দেখতে দেও। আমি মিনহাজকে নিয়ে বাসায় যাব। তোমরা আমাকে বলো মিনহাজের কি হয়েছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মা আমেনা বেগমের গগণবিদারী কান্না আর এমন আবেগতাড়িত প্রশ্নের কোনো উত্তর যেন জানা নেই স্বজনদের। আশপাশে মিনহাজের ভাই, বাবা আত্মীয়-স্বজন থাকলেও মায়ের এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারছিলেন না, কেউ ভাইকে জড়িয়ে, কেউ বাবাকে জড়িয়ে শুধু কেঁদে যাচ্ছেন।

বড় ভাই ও একই অফিসের সহকর্মী আনিসুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিনহাজরা তিন ভাই। মিনহাজ উদ্দিন রাজধানীর বাসাবোতে বড় ভাই মেহেদীর বাসায় থাকতেন। পড়াশুনা শেষ করে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে বছরখানেক ধরে চাকরি করছিলেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন।

মিনহাজের বন্ধু সৌমিত আহমেদ অরণ্য বলেন, ‘গতকাল রাতে ছোট ভাই আমিন, মিনহাজসহ কয়েকজন রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম। আমিন আর মিনহাজ ছিল উপরে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে। আমার মা বাড়ি যাবে এজন্য আমি আরেক বন্ধু মেহেদি হাসান রিফাতকে নিয়ে শ্যামলী যাই। পরে আমিন ফোন করে জানায়— সে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরের পাশ দিয়ে উপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েছে আর মিনহাজ উপরে। এরপর থেকে দাঁড়াতে পারছে না আমিন। কোমড়ে ব্যথা পেয়েছে। এরপর আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ফিরে আসি এবং ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমিনকে রেসকিউ করে হাসপাতালে পাঠাই।’

অরণ্য আরও বলেন, ‘একাধিকবার আমরা মিনহাজের মোবাইল ফোনে কল করেছি কিন্তু রিসিভ হয়নি। সারারাত ধরে মিনহাজকে খোঁজ করেছি, হাসপাতালে খুঁজেছি। সর্বশেষ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া একটি মরদেহ দেখানো হয়। হাতের ঘড়ি দেখে মিনহাজের মরদেহ শনাক্ত করি।’

পরিবারসূত্রে জানা যায়, মিনহাজ উদ্দিনের বাড়ি চাঁদপুর সদরের ইসলামপুর গ্রামে। বাবা ওলিউল্লাহ খান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, মা আমেনা বেগম গৃহিণী।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায় মিনহাজের পরিবারের স্বজনদের। বাবা ওলিউল্লাহ খান দুজনের ওপর ভর করে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু তাকে মিনহাজের মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। 

তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার মিনহাজ কই, ওরে আইনা দেও, একটু দেখব। ওর তো বাড়ি যাবার কথা ছিল। ও তে বাড়ি যাবে। ওকে নিয়ে আজই বাড়ি যাব।’

তবে এ ফেরাই যে বাড়িতে শেষ ফেরা সেটা তখনও জানেন না বাবা ওলিউল্লাহ ও মা আমেনা। 

মা আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার সোনাডা কই! একবার দেখতে দেও তোমরা কি লুকাচ্ছো! তোমরা কেন ওরে দেখতে দিচ্ছো না!’ 

বড় ভাই মেহেদী হাসান জানান, ‘মিনহাজকে দেখার পর দুনিয়াটা এলোমেলো হয়ে গেছে। তরতাজা ছেলে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। হাতে ও একটা ঘড়ি পড়তো। সেটা দেখেই শনাক্ত করেছি। এরপরও হাসপাতাল থেকে ডিএনএ স্যাম্পল নিয়েছে। ছাড়পত্র নিয়ে আজই মিনহাজের মরদেহ নেওয়া হবে চাঁদপুরে।’

জেইউ/এমজে