রাজধানীর ধানমন্ডি, ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশত রেস্তোরাঁয় আজ (সোমবার) একযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও পুলিশ। এসব অভিযানে বেশকিছু রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন রেস্তোরাঁর ১৬ জনকে আটক এবং ৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে করা কয়েকটি রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলাও হয়েছে।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের একটি সাততলা ভবনে আগুন লাগে। আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই ভবনের প্রায় প্রতিটি ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট ছিল। এ অগ্নিকাণ্ডের পরই রাজধানীর বিভিন্ন ভবনে রেস্তোরাঁ তৈরি নিয়ে উদ্বেগ জানান বিশেষজ্ঞরা। তারপরই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি।

সোমবার (৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের গাউসিয়া টুইন পিক ভবনে একটি রুফটপ রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ওই ভবনের ১২টি রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ সময় স্পাইস হারবস নামের একটি রেস্তোরাঁকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

প্রায় একই সময়ে মসজিদ এলাকার কেয়ারি ক্রিসেন্ট রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এই সময় প্রতিষ্ঠানটির ৩ জন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। পরে তাদের ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে অভিযানের খবরের পর নোটিশ টানিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ধানমন্ডির কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনের সব রেস্টুরেন্ট। নোটিশ বলা হয়, সব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এবং খাবার হোটেল বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র ২য় তলার মার্কেট এবং নিচ তলার।

বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন ভবনেও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় ধানমন্ডির কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজা সিলগালা এবং কেয়ারি ক্রিসেন্ট ও রূপায়ন জেড আর প্লাজার ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিস) ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ধানমন্ডির পাশাপাশি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় ১৫-১৬ টি রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগ। এ সময় তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৬ কর্মীকে আটক এবং বেশ কয়েকটি গ্যাসের সিলিন্ডার জব্দ করে।

অভিযান শেষে ডিসি মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, গতকাল রোববার থেকে অভিযানে নেমেছি। বিশেষ করে আমাদের ওয়ারী থানার অধীনে র্যাংকিং স্ট্রিট অনেক ব্যস্ততম একটি জায়গা। এই একটি ৫০টিরর বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই রেস্টুরেন্টগুলো আমরা ভিজিট করেছি। ভিজিট করতে গিয়ে আমরা যা পেয়েছি তা হলো— বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট আবাসিক ভবনের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে তারা এই রান্নার কাজগুলো চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ভিজিট করে দেখলাম সেখানে সেফটি কোড, কিচেন কোড কোনো কিছুই তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। কিছু রেস্টুরেন্টে কিচেন ৪ ফুট বাই ৬ ফুট জায়গার মধ্যে করা হয়েছে। এমন জায়গার মধ্যে সাত থেকে আটজন শেফ রান্না করছে। যেই দরজা খুলে কিচেন থেকে বের হবে সেই দরজার সামনে চালের বস্তা, আটার বস্তা রাখা হয়েছে। এছাড়া একই পাশে বিভিন্ন সিলিন্ডার, জেনারেটর রেখেছে। মূলত চরম অনিরাপদ অবস্থায় তারা রেস্টুরেন্টগুলো পরিচালনা করছে।

ইকবাল হোসাইন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। মিনিমাম সেফটি যারা মেইনটেইন করতে পারেনি এমন রেস্টুরেন্ট থেকে তাদের আটক করা হয়েছে।  

এদিকে রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব রেস্তোরাঁয় কর্তৃপক্ষ পাওয়া গেছে, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে। যেসব ভবন সিলগালা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর আদেশ ঢাকা জেলা প্রশাসনে বরাবর পাঠানো হবে। তারা পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেবে।

এর আগে গতকাল ৩ মার্চ সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত  রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, মিরপুর ও উত্তরার প্রায় অর্ধশত রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে কয়েকটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক, কর্মীসহ অন্তত ২২ জনকে আটক করে পুলিশ।

এএইচআর/এমএ