মোটরযান নিবন্ধন/রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সনদ ইস্যু, নবায়ন, রুট পারমিট ইস্যু ও নবায়নে ঘুষ প্রদানসহ অন্যান্য বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুমান নির্ভর, অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।

বুধবার (৬ মার্চ) বনানীতে বিআরটিএর সদর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুমান নির্ভর তথ্য যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টিসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে, এরূপ প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। আমরা টিআইবির কাছে এর লিখিত ব্যাখ্যা চাইবো। টিআইবি যে গঠনমূলক ও বাস্তবধর্মী সুপারিশগুলো করেছে তা আমরা আমলে নিয়ে কাজ করবো।

তিনি আরও বলেন, বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালের (bsp.brta.gov.bd) মাধ্যমে সেবাগ্রহীতারা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স, রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের আবেদন ঘরে বসে দাখিল ও ঘরে বসেই সার্টিফিকেট প্রিন্ট করতে পারছেন। অধিকন্তু, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী পরীক্ষার দিনই বায়োমেট্রিক প্রদান করে দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অনলাইনে প্রযোজ্য ফি জমা প্রদানপূর্বক আবেদন দাখিল করে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ওই দিনই পেয়ে যাচ্ছেন, যা ব্যবহার করে গাড়ি চালাতে পারছেন। এ ছাড়াও অনলাইনে আবেদন দাখিলের ৭-১৫ দিনের মধ্যে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাকযোগে আবেদনকারীর কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু সেবা পেতে সশরীরে বিআরটিএ তে আসার প্রয়োজন হয় না, সেহেতু উল্লেখিত সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয়। 

নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, মোটরযান মালিক ডিলার বা শো-রুম থেকে মোটরযান ক্রয়ের পর অনলাইনে মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিজে বা ডিলার/শো-রুমের মাধ্যমে বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালে দাখিল করতে পারেন। অনলাইনে আবেদন দাখিলের পর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসে মোটরযান সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক একই দিনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখিত গড় ব্যয়িত সময় ৩০ কর্মদিবসের বিষয়টি অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত।

তিনি বলেন, ১৫ অক্টোবর ২০২০ থেকে ফিটনেস নবায়নে অনলাইনে অ্যাপয়নমেন্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অ্যাপয়নমেন্ট অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে মোটরযান সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে হাজির করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উপযুক্ততা সাপেক্ষে ফিটনেস সার্টিফিকেট একই দিনে প্রদান করা হয়। 

বিআরটিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ফিটনেস নবায়নে মোটরযান ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টারের (ভিআইসি) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানের লক্ষ্যে বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেল, মিরপুর অফিসে ১২ (বার) লেন বিশিষ্ট ভিআইসি চালু করা হয়েছে। অন্যান্য সার্কেল অফিসে ফিটনেস প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট মোটরযানের সচিত্র ছবি ধারণ করে ডিজিটালি আর্কাইভ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফিটনেস নবায়নে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফিটনেস সনদ প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে সেহেতু সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

টিআইবির অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, রুট পারমিট সার্টিফিকেট ইস্যু/নবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের যাত্রী, ও পণ্য পরিবহন কমিটির সুপারিশের আলোকে বিআরটিএ থেকে নির্ধারিত সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রুট পারমিট সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভা অনুষ্ঠানের বিলম্ব হওয়ার কারণে রুট পারমিট ইস্যু/নবায়নে সময়ক্ষেপণ হতে পারে। তবে এই সময় কোনোক্রমেই প্রতিবেদনে উল্লেখিত ৪৫ কর্মদিবস নয়। এক্ষেত্রে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।

এমএইচএন/এনএফ