নরসিংদী থেকে খোয়া যাওয়া একটি বাটন মোবাইল পাওয়া যায় ঠাকুরগাঁওয়ে। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে জানা যায়, চারজনের হাতবদল হয়ে মোবাইলটি ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে সচল হয়। মোবাইলটি এক এক করে সর্বশেষ ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতেই বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের রহস্য। জানা যায়, নরসিংদীতে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চুরি করার সময় টের পেয়ে যাওয়ায় সেই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন করে চোর।

নরসিংদীর মাধবদী থানার দক্ষিণ বিরামপুরের নিজ বাড়িতে মিষ্টি ব্যবসায়ী নির্মল দেবনাথকে (৪৩) হত্যার ঘটনার জড়িত মাসুম বিল্লাকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত ৬ মার্চ মাধবদী থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মাসুম হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

রোববার (১০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির পিবিআই সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআইর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

তিনি বলেন, গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী নির্মল দেবনাথের স্ত্রী মনি দেবনাথ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাবার বাড়ি যান। মিষ্টির দোকানের কাজ শেষে নির্মল দেবনাথ রাতে বাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন সকালে ভুক্তভোগীর স্ত্রী-সন্তানরা বাড়ি এসে দেখেন খাটের উপর নির্মল দেবনাথের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ। কে বা কারা নির্মল দেবনাথকে খুন করে তার ব্যবহৃত সিম্ফনি বাটন মোবাইলটি নিয়ে যায়।

পরে ভিকটিমের ছেলে দুর্জয় দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গত ৩১ ডিসেম্বর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

পিবিআইর এ কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি তদন্তে নেমে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ভুক্তভোগী নির্মল দেবনাথের মোবাইল ফোন উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানা যায়, মোবাইলটি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থানা এলাকায় ব্যবহৃত হচ্ছে। গত ১ মার্চ দুপুরে ঠাকুরগাঁও থেকে লাইলী খাতুন নামে একজনকে মোবাইলসহ আটক করা হয়।

মোবাইলের বিষয়ে লাইলী জানায়, মাধবদী এলাকায় চাকরি করার সময় সাকিল নামের একটি ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সাকিল তাকে মোবাইলটি দিয়েছে। পরে নরসিংদী থেকে আটক করা হলে সাকিল জানায়, রবিন নামে আরেকজনের কাছ থেকে ২৫০ টাকায় মোবাইলটি কিনেছে সে।

একপর্যায়ে রবিনকে আটক করা হয়। রবিন জানায়, মোবাইলটি তার ফুপাতো ভাই মাসুম বিল্লা তাকে প্রায় তিন মাস আগে বিক্রির জন্য দেয়। পরে পিবিআই নরায়নগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। 

গত ৬ মার্চ মাধবদী থেকে মাসুম বিল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মাসুম বিল্লা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে।

মাসুদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে পিবিআইর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, গত ১৪ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে নির্মল দেবনাথের বাড়িতে চুরি করতে যায় মাসুম। বাড়ির ছাদে উঠে গেট দিয়ে ঘরে ঢুকে। ঘুমন্ত নির্মলের মোবাইল ও মানিব্যাগটি নিয়ে নেয়। একপর্যায়ে নির্মলের ঘুম ভেঙে গেলে সে বটি দা নিয়ে চোরকে ধাওয়া করে।

ধারালো বটি হাতে নিয়ে মাসুম বিল্লার দিকে এগিয়ে গেলে সে তার হাত ধরে ফেলে। এরপর তাদের মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে মাসুম বিল্লা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নির্মলের ঘরে ঢুকে তার হাতে থাকা বটি-দা কেড়ে নেয়। নির্মলকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে মোবাইল আর টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায় মাসুম।

জেইউ/পিএইচ