দেশে ১৯ কোটির বেশি মোবাইল গ্রাহকের স্বার্থে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য অবিলম্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

সোমবার (১১ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘টেলিযোগাযোগ খাতে বাজারে প্রতিযোগিতা, মুঠোফোন গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।  

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিটিআরসি মহাপরিচালক (সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান, প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক গাজী গোলাম তৌসিফ, পরিচালক খালিদ আবু নাসের, প্রকৌশলী মো. আবু সালেহ, শেখ ইকবাল হাসান স্বপন, আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, মোবাইল গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিযোগিতা আইন ও এসএমপি প্রবিধানমালার যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর রয়েছে। এই অপারেটরদের বর্তমানে যে গ্রাহক সংখ্যা ও রেভিনিউ মার্কেট শেয়ার রয়েছে তার ভিত্তিতে এইচএইচআই (হারফেন্ডাল-হার্শম্যান ইনডেক্স) সূচক অনুসারে প্রতিযোগিতায় খুব একপেশে ও কর্তৃত্বপূর্ণ অপারেটর উপস্থিতি নির্দেশ করে। এইচএইচআই সূচক হলো বাজার প্রতিযোগিতার অবস্থা পরিমাপে বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। 

তারা বলেন, বর্তমানে এ খাতে গ্রাহকের ভিত্তিতে প্রথম অবস্থানে থাকা গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার ৪৩.২%, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবি আজিয়াটার ৩০.৬%, বাংলালিংকের ২২.৮% এবং চতুর্থ অপারেটর টেলিটকের ৩.৪%। রেভিনিউয়ের দিক থেকে গ্রামীণফোনের বাজার হিস্যা প্রায় ৫০%। 

বাজার প্রতিযোগিতা পরিমাপের আরেকটি সূচক কনসেন্ট্রেশন রেশিও। বর্তমানে মোবাইল সেবার বাজারের সিআর-৩ তথা প্রথম তিন অপারেটরের মার্কেট শেয়ারের সমষ্টি গ্রাহক ভিত্তিতে ৯৬.৬% আর রেভিনিউ ভিত্তিতে ৯৮.৫%। এই অবস্থায়, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে এই বাজার মনোপলির দিকে ধাবিত হবে।

সর্বশেষ অবস্থানে থাকা তিনটি অপারেটরের জন্য এই বাজারে টিকে থাকা তাই বেশ কঠিন উল্লেখ করা বক্তারা বলেন, একই সঙ্গে টেলিযোগাযোগ খাতের বিনিয়োগও সংকটের মুখে পড়বে। এই অবস্থা একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির সংকেত দেয়, যেখানে বাজার প্রতিযোগিতা ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। 

যার ফলশ্রুতিতে গ্রাহক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, উদ্ভাবনী সেবার প্রসার বাজারে হ্রাস পাবে এবং সার্বিকভাবে তা মোবাইল ভিত্তিক সেবার অর্থনৈতিক অবদানে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে। এই পরিস্থিতি নিরসনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের বাজার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে যেসব নীতিমালা রয়েছে সেগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। দেশে প্রতিযোগিতা আইন রয়েছে-সেটি ভঙ্গ করে কোনো অপারেটর যদি ক্রস সাবসিডি, প্রতিযোগিতা ভঙ্গকারী মূল্য নির্ধারণ করে অথবা খুচরা পর্যায়ে প্রতিযোগিতাবিরোধী অফার দেয় তাহলে সেসব নিয়ন্ত্রণে বিধান রয়েছে কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। 

বক্তারা আরও বলেন, এসব প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যক্রম মনিটরিং এবং প্রতিরোধ করতে একটি নীতিমালা ইতোমধ্যে ২০১৮ সালে বিটিআরসি প্রণয়ন করেছে, যা এসএমপি রেগুলেশন (সিগফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার) ২০১৮ নামে পরিচিত। এই এসএমপি বিধিমালার ভিত্তিতে বিটিআরসি ২০১৯ সালে ২০টি নিয়ন্ত্রণমূলক বিষয় নির্ধারণ করেছিল। যার মধ্যে মাত্র ৩টি বিষয় প্রয়োগ করা হয়েছে ২০২০ সালে, বাকিগুলো এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়াও প্রতিযোগিতাবিরোধী কার্যক্রম মনিটরিং-এর ক্ষেত্রে এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের পর্যালোচনা করতে দেখা যায়নি। ১৯ কোটির বেশি মোবাইল গ্রাহকের স্বার্থে বাজার প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে অবিলম্বে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

এএসএস/এমএসএ