শুরু হচ্ছে পবিত্র ও মহিমান্বিত মাস মাহে রমজান। রমজানের ইফতারিতে শরবত পান করেন রোজাদাররা। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এবার ইফতারির শরবতও মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

রোজা সামনে রেখে ইতোমধ্যে বেড়েছে শরবতের বিভিন্ন উপাদানের দাম। ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ আফজাসহ এ ধরনের সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে।

রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২১০০ টাকায়। যা তিন মাস আগে ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ট্যাং বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০০ টাকা। ৭৫০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত ট্যাং আগে বিক্রি হতো ৭৬০ টাকায়। এখন নতুন উৎপাদন করা প্যাকেটে দাম বাড়ানো হয়েছে। ছোট সাইজের  রুহ আফজা ৩০০ মিলিলিটারের দাম আগে ছিল ২১০ টাকা। এখন ২৮০ টাকা করা হয়েছে। বড় সাইজের রুহ আফজা আগে ছিল ৩৫০ টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এছাড়া ইসপি, অরেঞ্জ, ম্যাংগো ফ্লেভারের বিভিন্ন শরবতের পাউডারের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি বাজার থেকে গত পরশু ইসবগুলের ভুসিসহ নানা প্যাকেটজাত ও জারভর্তি শরবতের পাউডার নিজের দোকানে বিক্রির জন্য কিনে এনেছেন রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন একটি বাজারের দোকানি হাবিবুর রহমান। আলাপকালে তিনি জানান, শরবত আইটেমের মধ্যে ইসবগুলের ভুসির খুব চাহিদা থাকে রমজান মাসে। পাইকারি বাজারে এটা কিনতে গিয়ে দেখি আগের চেয়ে কেজিতে দাম প্রায় ৫০০ টাকা বেড়েছে। এটার দাম তিন মাস আগেও ক্রেতা পর্যায়ে ছিল ১৬০০ টাকা কেজি। কিন্তু এখন দাম বেড়ে ২১০০ টাকা হয়েছে।

দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ফ্লেভারের প্যাকেটজাত জুসের পাউডারের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে।

রুহ আফজার বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম এখন বাড়তি। তাই উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে। যে কারণে এ বছর রমজানের আগে যেসব নতুন মাল বাজারে ছাড়া হয়েছে সেগুলোর দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। মূলত উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা পর্যায়ে রুহ‌ আফজার দাম অল্প পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে, গুণগতমানে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ আফজার পাশাপাশি শরবতের অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। 
এই মুহূর্তে বেলের দাম ১ পিস ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, লেবুর হালি (৪ পিস) ৬০ টাকা, পুদিনা পাতা ১০ গ্রাম ৩০ টাকা, ৬ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ৫০০ টাকা, মাঝারি সাইজের একটি আনারস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা কমলার কেজি ৩৬০ টাকা, ডাব ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাল্টা প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মহাখালী এলাকার ডাব বিক্রেতা আক্কাস আলী বলেন, মাঝারি সাইজের ডাব পাইকারি বাজারে এখন প্রতি পিস ৮০-৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর প্রতি ১০০ পিস কিনতে লাগছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, রোজা সামনে রেখে গত কয়েকদিনে কারওয়ান বাজারেও ডাবের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। ঢাকায় বেশিরভাগ ডাব আসে ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকে। এসময় গাছে ডাব কম থাকে, আবার রোজা শুরু হচ্ছে। সবমিলিয়ে বাজারে চাহিদার তুলনায় ডাবের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে।

রাজধানীর গুলশান এলাকার ফলের দোকানি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ইফতারিতে অনেকে ফলমূল বেশি খান, সে কারণে চাহিদাও থাকে অনেক বেশি। রমজান মাসে ফলের ফ্রেশ জুসের চাহিদা বেশি থাকে। তাই ফলের দামও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে মাল্টা, কমলা, বেল, আনারস, বেদানার  দাম বেড়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে প্রতি পিস বেল ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বেদানা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, মাঝারি সাইজের আনারস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা কমলার কেজি ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব ফল দিয়ে ইফতারিতে জুস করে খান অনেকে। তাই অন্য ফলের পাশাপাশি শরবত আইটেম হিসেবে কাজে লাগা ফলগুলোর দাম বেড়েছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে রোজা উপলক্ষ্যে কেনাকাটা করতে আসা সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশে রমজান মাস এলে সব পণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়, অথচ আমাদের দেশে উল্টোটা ঘটে। সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। অন্য সবকিছুর দাম না হয় বাদই দিলাম, ইফতারিতে মানুষ যে শরবত খাবে তার উপকরণের দামও বেড়ে গেছে। ট্যাং, রুহ আফজা থেকে শুরু করে বেল, লেবু, পুদিনা পাতা, আনার, পেঁপে, ডালিম সবকিছুর দাম বাড়তি। 
তিনি বলেন, যারা বড়লোক তাদের হয়ত কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আমরা যারা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ তারা তো কূল পাচ্ছি না। রোজায় শরবত আইটেমেরও যতি দাম বেড়ে যায় তাহলে আমরা কীভাবে কী করব?

এএসএস/এসএসএইচ