চুড়িহাট্টায় আগুনে পুড়ে অঙ্গার গাড়ি-স্থাপনা

রাজধানীর পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা স্থানান্তর এবং গোডাউনগুলো কম জনবহুল এলাকা ও পরিবেশবান্ধব জায়গায় নির্মাণের লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ নির্মাণ করছে সরকার। জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও এর বাস্তবায়নের অগ্রগতি নেই খুব একটা। এ নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ পরিদর্শন করেন আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। প্রকল্পটির পরিদর্শন প্রতিবেদনে সচিব বলেন, ‘প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি হতাশাব্যঞ্জক। প্রকল্প পরিচালক ২০২১ সালের জুন মাসে পিআরএল-এ যাবেন। তার কাজের প্রতি আগ্রহ তেমন দেখা গেল না। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী প্রকল্পটির ১৭টি পূর্ত কাজের প্যাকেজের মধ্যে ১৫টি প্যাকেজের কাজ- প্যাকেজ ১৭ ভূমি অধিগ্রহণ ও প্যাকেজ ১৬ ভূমি উন্নয়ন কাজের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে প্যাকেজ ১৭ ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর প্যাকেজ ১৬ ভূমি উন্নয়নের কাজ চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পূর্ত কাজের অন্যান্য প্যাকেজগুলোর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত আছে আগামী জুনে। কিন্তু সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে এবং ভূমি প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। কিন্তু ভূমি উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ বাস্তবে এখনো শুরুই হয়নি।’

আইএমইডির প্রতিবেদনে সচিব জানান, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বিশাল প্রকল্প এলাকা ৩০৮ দশমিক ৩৩ একর যা ৩ দশমিক ৫০ মিটার উচ্চতায় মাটি ভরাট করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়নি। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মাটি ভরাটের কাজ করা সম্ভব হবে কি না তাও অনিশ্চিত। ভূমি উন্নয়ন কাজ সঠিকভাবে করতে না পারলে প্রকল্পের অন্যান্য কাজ এগিয়ে নেওয়াও সম্ভব নয়।’

বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রকল্প

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, ‘এ প্রকল্পের মূল কাজ হচ্ছে মাটি ভরাট। মাটি ভরাট হয়ে গেলে বাকি কাজ এক-দুই মাসের মধ্যে টেন্ডার করা হবে। টেন্ডার হয়ে গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্প সমাপ্ত করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সভায় মাটি ভরাটের কাজের অনুমোদন হয়ে গেছে। আমরা প্রথমে বিমানবাহিনী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজটি করার জন্য প্রস্তাব করেছি। সেসময় আমাদের এ প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়নি। তখন অনুমোদন হয়ে গেলে এতদিন মাটি ভরাটের কাজটি হয়ে যেত।’

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্পটি সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। কারণ ভূমি অধিগ্রহণে এক হাজার কোটি টাকা ধরা ছিল। ভূমি অধিগ্রহণে আমাদের ৪৭০ কোটি টাকাও খরচ হয়নি। ডিপিপিতে যা ধরা ছিল, তার তুলনায় অনেক কম অর্থে জমি ক্রয় করতে পেরেছি। নিয়ম অনুযায়ী অর্থবছর শেষে টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে। এর বাইরেও ভবিষ্যতে যদি প্রকল্পের কোনো খাতে টাকা বাড়ে, তাহলে বেঁচে যাওয়া টাকা থেকে খরচ করতে পারব।’

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর পুরান ঢাকায় প্রায় চার হাজার রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম রয়েছে। দাহ্য এসব রাসায়নিক গুদাম সেই এলাকার বাসিন্দাদের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়।

প্রকল্পের আওতায় যেসব কাজ করা হবে

ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ, ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন নির্মাণ, গভীর নলকূপ স্থাপন, পানির সরবরাহ লাইন, ইলেকট্রিক লাইন স্থাপন, গ্যাস লাইন স্থাপন, জেটি নির্মাণ, সিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড এবং ইনসিনারেটর স্থাপন, দুটি মেইন গেট নির্মাণ।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এর মেয়াদ জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পে মোট ব্যয় এক হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে পরিকল্পিতভাবে প্রায় দুই হাজার ২৯০টি শিল্প কারখানা/গোডাউন (গুদাম) স্থাপন ও প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

এসআর/আরএইচ/এফআর/জেএস