রাজধানীর ভোজন রসিকদের কাছে সুপরিচিত একটি নাম পুরান ঢাকা। কেননা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও লোকজ পার্বন ঘিরে নানান মুখরোচক খাবারের জন্য এখানকার জুড়ি নেই। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের রমজানে বাহারি সব আইটেমের আয়োজন রয়েছে পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতার বাজারে। আস্ত কোয়েল পাখি, কবুতর, মুরগির সঙ্গে রয়েছে আস্ত চীনা হাঁস ও পাতি হাঁসের রোস্ট।

চকবাজারের শাহী মসজিদের সামনের এই আয়োজন চলবে পুরো মাস জুড়ে। পুরো রাস্তা জুড়েই ইফতার সামগ্রীর দোকানে নানান খাবারের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আস্ত কোয়েল পাখির রোস্ট আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০-১০০ টাকায়। আর পাতি হাঁসের রোস্ট এক হাজার টাকায়, চিনা হাঁসের রোস্ট এক হাজার ৫০০ টাকায় ও কবুতরের রোস্ট বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।

এছাড়া ছোলা, আলুর চপ ও পেঁয়াজুর সঙ্গে রয়েছে লম্বা শিকের সঙ্গে সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে তৈরি করা সুতি কাবাব, শিক কাবাব, শামি কাবাব, রেশমি কাবাব, জালি কাবাব, বটি কাবাব, খিরি, গুর্দা, টেংরি ও হান্ডিসহ নানান নামের হরেক রকমের খাবার। আর আস্ত মুরগি, খাশির পায়ের রোস্ট, রেজালা, চাপ তো রয়েছেই।

দোকানিরা জানান, এবার চকবাজারে সুতি কাবাব বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে। যার দাম গত বছর ছিল এক হাজার ২০০ টাকা। আবার পিস প্রতি গরুর টিকা ৪০ টাকা, দুধ নান ৮০ টাকা, স্পেশাল সবজি নান ৮০ টাকা, পেশোয়ারি পরটা ৪০ টাকা, গরুর শিক কাবাব ৭০ টাকা, গরুর কাঠি কাবাব ৫০ টাকা ও মুরগির চাপ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, সবকিছুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মিষ্টান্নের দামও। যেখানে গত বছর ২৫০ টাকা কেজি দরে শাহী জিলাপি বিক্রি করা হয়েছে, সেখানে এবার এর দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। আবার শরবতও বিক্রি হচ্ছে গতবারের তুলনায় ১০-২০ টাকা বেশি দরে। পেস্তা বাদাম শরবত বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, কাশ্মিরি পেস্তা বাদাম শরবত ৩০০ টাকা, স্ট্রবেরি শরবত ১০০ টাকা ও মাঠা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এসব বাহারি মুখরোচক খাবার কিনতে দুপুরের পর থেকেই চকবাজারে ভিড় করছেন আশপাশের এবং দূর থেকে আসা মানুষজন। এছাড়া, অফিস ফেরত চাকরিজীবীদের ইফতার কিনে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে।

রুপম ইসলাম নামের একজন বলেন, চকবাজারের শরবত আমার কাছে বেশি প্রিয়। লাবাং, নুরানি লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদামের শরবত, মাঠা ও কাশ্মিরি লাচ্ছি পাওয়া যাচ্ছে। বাসার জন্য প্রায়ই এখান থেকে বাদাম শরবত নিয়ে যাই। তবে দামটা গত বছরের তুলনায় বেশিই মনে হচ্ছে। সেজন্য শরবত পরিমাণে কম নিয়েছি। 

আব্দুল লতিফ নামের আরেকজন বলেন, আমার বাসা আজিমপুরে। ছোটবেলা থেকেই এখান থেকে নানান ইফতার সামগ্রী কিনে নিয়ে যেতাম। শাহী জিলাপি, শাকপুলি, ডিম চপ, কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, দইবড়া, হালিম, ছানামাঠা, কিমা গরু ও মুরগির পরোটাসহ অনেককিছু পাওয়া যাচ্ছে। বাচ্চাদের জন্য এখান থেকে ইফতার নিলাম। তবে স্বাদ আগের মতো নেই। অনেকটা কমে গেছে। তারপরও ঐতিহ্য আর স্মৃতির টানেই এসেছি।

আরএইচটি/কেএ