ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, দেশ ডিজিটাল হচ্ছে। লেখাপড়া, চাকরি, বাজার সবাই এখন ডিজিটালি হচ্ছে। সুতরাং খারাপ জিনিসও ঢুকছে ডিজিটাল মাধ্যমেই। সত্য ঢুকলে সেখানেও ঢুকে পড়ে মিথ্যাও। সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে বেছে নিতে হবে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। 

বুধবার (১৩ মার্চ) বারিধারায় সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে নাগরিক ঢাকা আয়োজিত ‘সাইবার ক্রাইম এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য এর ঝুঁকি এক্সপোজার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

নাগরিক ঢাকা একটি টেকসই, ঐক্যবদ্ধ, এবং বিশ্বব্যাপী সম্মানিত ঢাকা শহর গড়ে তোলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সংগঠন। তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে সাইবার অপরাধের ঝুঁকি মোকাবিলায় বছরব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করেছে সংগঠনটি।

কিশোর-তরুণদের উদ্দেশে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা যখন তোমাদের বয়সে ছিলাম, তখন কিন্তু দেশে ডিজিটাল মাধ্যম এতটা এগিয়ে ছিল না। তখন কিন্তু সাইবার ক্রাইম, ডিজিটাল মাধ্যম, মোবাইল বা কম্পিউটার ছিল না। সেই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে বই পড়েই ঢাকায় এসেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। এখন ছোট ছোট সাইবার অপরাধ হচ্ছে। যার বেশিরভাগই হচ্ছে নারী ও শিশুকেন্দ্রীক। তরুণ ও শিশু-কিশোরদের ছোট্ট ভুলে ব্লাকমেইলের শিকার হন অভিভাবকরা। সেজন্য আগে সাইবার অপরাধ সম্পর্কে নিজের মধ্যে ধারণা তৈরি করতে হবে। বুঝতে হবে, জেনে হোক না জেনে হোক কাউকে ছবি দেওয়া যাবে না। 

তিনি বলেন, বাবা-মা যখন সন্তানের ভুলে ব্লাকমেইলের শিকার হোন, ফাঁদে পড়ে টাকা দিতে থাকেন, একটা পর্যায়ে অসহায় হয়ে পড়েন। তখনই কেবল আমাদের কাছে আসেন। তখন আমরা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু করি। 

অভিভাবকদের উদ্দেশে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান বলেন, যখনই আমাদের তরুণ, যুবক, শিশু-কিশোররা অথবা যে কেউ সাইবার ক্রাইমের শিকার হোন না কেন, তখন অভিভাবক, পিতামাতা কিংবা ভুক্তভোগী নিজেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে তাৎক্ষণিক রিপোর্ট করতে পারেন। সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ বা সম্পর্ক থাকে মায়ের। মায়ের উচিত খেয়াল রাখা, খবর নেওয়া, বোঝার চেষ্টা করা... আমার সন্তান কে কী করছে, তার সঙ্গে চ্যাটিং, হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলছে। এখন অনলাইনেই বেশি অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। পর্নগ্রাফি, অথবা পর্নগ্রাফির ফাঁদ, মাদক সবই এখন মিলছে অনলাইন বা সাইবার স্পেসে। 

যাকে চেনেন না, জানেন না, তার সঙ্গে কীসের ফ্রেন্ডশিপ? এমন প্রশ্ন রেখে হারুন বলেন, এই প্রশ্ন নিজেই নিজেকে করুন, অনলাইনে শুধু পজিটিভগুলো গ্রহণ করুন। যত বেশি অফারই আসুক না কেন! আগে জানুন, তারপর অনলাইনে কেনাকাটা করুন।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঢাকার সভাপতি এম নাঈম হোসেন প্রযুক্তির দ্বৈত প্রকৃতি তুলে ধরেন। পাশাপাশি তরুণদের সাইবার স্পেস নেভিগেট করতে, সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করার বিষয়ে সুপণ্ডিত হওয়ার ওপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বারিধারা সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ উইং কমান্ডার (অব.) এ এম আমজাদ হোসেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্কুল অব বিজনেসের প্রধান অধ্যাপক এস এম আরিফুজ্জামান এবং নাগরিক ঢাকার শিক্ষা বিষয়ক সচিব এবং নাগরিক ঢাকার আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান।

জেইউ/কেএ