মিথ্যা-বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার এবং মৌলিক অধিকার স্বীকৃত আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন অধিকার কর্মী সাধনা মহল।

রোববার (১৭ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী হলে ‘পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিচারিক নির্যাতনের শিকারের’ অভিযোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে সাধনা মহল বলেন, ২০১২-১৩ সালে আমি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) জেন্ডার উপদেষ্টা থাকার সময় গোবিন্দ বরের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। গোবিন্দ বরের পরিচয় যেটুকু জানতাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। ১০ বছরের বেশি ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন। প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ, এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সু-বক্তা ও ভদ্রলোক। দৈনিক পত্রিকায় চাকরি করেছেন। বর্তমানে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে বহাল আছেন।

তিনি বলেন, ২০২১ এর নভেম্বর এ মায়ের মৃত্যুর পরে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। গোবিন্দ বর আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থী হয়ে আসেন এবং নানা চাতুর্যে নিজেকে অসহায় হিসাবে উপস্থাপন করে আমার প্রেম ও সঙ্গ কামনা করেন। স্বভাব করুণা বশে এবং নিজে মানুষ সম্পর্কে হীনতার জ্ঞান না থাকায় তাকে আমি আশ্রয় দিতে সম্মত হই। আমরা স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিবাহ করি। কিন্তু  বিয়ের এক মাসের মধ্যে গোবিন্দের আগের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তখন জানলাম যে গোবিন্দর প্রথম বিবাহ বলবৎ আছে। হিন্দু ধর্ম মতে স্ত্রীকে আজীবন বাসস্থান ও ভরণপোষণ দিতে হয় এবং দিয়ে লিগ্যাল সেপারেশন করতে হয়। শুধু টাকা দিতে হবে এ কারণে গোবিন্দ খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় এবং কোনোদিনই লিগ্যাল সেপারেশন করেনি। স্ত্রী-সন্তানদের প্রাপ্য ভরণপোষণ দিয়ে লিগ্যাল সেপারেশনের জন্য তাকে আমি অনেক অনুরোধ করি। তিনি আমার কথায় কর্ণপাত তো করেননি বরং আমাকে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন যে আমি যেন ছয় মাসের জন্য বাসা ছেড়ে চলে যাই। তিনি প্রথম স্ত্রীকে ম্যানেজ করবেন। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।

নির্যাতনের কথা তুলে ধরে সাধনা মহল বলেন,  ২০২৩ সালের মার্চ মাসে অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় বিয়ের অভিযোগে গোবিন্দর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন তার প্রথম স্ত্রী। এই দুটি মামলার পর কোনো অভিযোগ ছাড়াই মিউচুয়াল বিবাহবিচ্ছেদের জন্য গোবিন্দ’র শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা আমার ওপর ক্রমাগত বাড়তে থাকে। মাত্র দুই মাসে গোবিন্দ কয়েক দফায় আমাকে মেরে জখম করে। ভোর ৩টার দিকে মদ্যপ অবস্থায় আমাকে মেরে করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি (গোবিন্দ)  প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকি দিতেন ‘তুমি নিখোঁজ হয়ে যাবা’, ‘কেউ তোমাকে খুঁজে পাবে না’ এবং ‘কেউ বুঝবে না তুমি কোথায় আছো, মাটিতে পুঁতে ফেলব।’

‘তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাদের কথা, উত্ত্যক্ত আলাপ উদ্দেশ্যমূলকভাবে রেকর্ড করতে শুরু করেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তা ভিডিও করতে শুরু করেন। আমি তার পাশবিক পরিচয় জেনে ফেলায় ও তার ব্ল্যাক মেইলিংয়ে নতি স্বীকার না করায়, আমাকে দুশ্চরিত্রা, অর্থলোভী, মানসিক বিকার গ্রস্থ, নেশাখোর, দেহব্যবসায়ী বলে আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, বন্ধুজনের কাছে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনা শুরু করেন। প্রভাব খাটিয়ে গোবিন্দ ২০টি পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে, অনলাইন পোর্টালে, ইউটিউবে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ ভিডিও তৈরি করে ভাইরাল করে আমাকে একজন বিবাহ ব্যবসায়ী, অর্থলোভী, দেহব্যবসায়ী, মানব পাচারকারী ইত্যাদি ক্ষমার অযোগ্য মিথ্যাচার প্রচার করেছে।’

সাধনা মহল বলেন, গত ৬ মার্চ আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার করা হয়। ফিনল্যান্ড থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে অবতরণের পর ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। কয়েক ঘণ্টা হয়রানির পরে ঢাকার ভাটারা থানা সি এম এম গারদ, আদালত হয়ে দুটি আলাদা জামিন নিতে হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে গোবিন্দ বর দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় নন-এফআইআর অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি আলাদা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল এবং আমার মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করার ফলে এ দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা সম্ভব হয়েছে। আমি এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলাম। পরে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তারের জন্য আমার স্বজনদের কাছে গেলে এ মামলা সম্পর্কে জানতে পারি। আমার দেশে আসা ও দেশ থেকে বের হওয়ার পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়। এটি করা হচ্ছে মূলত আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার এবং সন্তানদের প্রতি মা হওয়ার যে অধিকার তার থেকেও যেন আমাকে বঞ্চিত করা যায়, এই কূট ইচ্ছা ও হিংসা চরিতার্থ করার জন্য। কিন্তু আদালত গোবিন্দ বরের পদক্ষেপকে বাতিল করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে আমার অনুপস্থিতিতে বাড়ির সব জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর উল্টো আমার বিরুদ্ধেই গুলশান থানায় দণ্ডবিধির ৩৮০ ধারায় একটি চুরির মামলা দায়ের করে গোবিন্দ। অবৈধ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গোবিন্দ এ নাটক সাজায় গুলশান থানার পুলিশের সহায়তায়। যার ফলে পুলিশ আমাকে গুলশানের রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করে, তার ব্যবহৃত কালো হাভাল জিপে বলপ্রয়োগ করে আটক করে নিয়ে যায় থানায় এবং আমাকে সারারাত ট্রমা টাইজ করে নির্যাতন করে।

‘আমার বিরুদ্ধে এতগুলো মিথ্যা মামলা, দুই দফা গ্রেপ্তার, পুলিশি নির্যাতন, ভাড়া করা গুন্ডা, বাড়ি থেকে উৎখাত করা, জেলহাজতে রেখে নির্যাতন করা, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলা, আর্থিক ক্ষতি করা, সামাজিকভাবে সম্মানহানি, অশ্লীল ভিডিও তৈরি ও প্রচার, কুৎসা রটানো, আটটি মাস আমাকে পলাতক মানুষের জীবনযাপনে বাধ্য করা হয়েছে। আমি এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আইনের সঠিক আশ্রয় চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী রওশন আরা লীনা, মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান, রাজনৈতিক কর্মী হাসিবুর রহমান প্রমুখ।

ওএফএ/এসএসএইচ