পুরান ঢাকার চকবাজারে ইফতারের বিকিকিনি/

প্রথম দশক পেরিয়ে দ্বিতীয় দশকে পড়েছে পবিত্র রমজান মাস। মাসজুড়েই ইফতার আয়োজন নিয়ে উৎসবমুখর থাকে পুরান ঢাকার চকবাজার। নানা স্বাদের মুখরোচক আর ঐতিহ্যবাহী খাবারের ইফতার কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসেন এখানে।

আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চকবাজারে ইফতার কিনতে হাজির হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। মানুষের ভিড়ে সেখানে তিল ধারণের জায়গা নেই। 

জুমার নামাজের পর থেকে চকবাজার শাহী মসজিদের সামনের অস্থায়ী এ ইফতার বাজারে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। বিকেল গড়াতে গড়াতে মানুষের ভিড় রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়।  

প্রায় ৫০-৬০ বছরের পুরোনো এই ইফতার বাজার নানা স্বাদের মুখরোচক ও নবাবী ঘরানার খাবারের জন্য বিখ্যাত। ইফতারের নিয়মিত আইটেমের পাশাপাশি এখানে পাওয়া যায় রয়েছে এলাকাভিত্তিক মুখরোচক খাবার। 

এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে--  বড় বাপের পোলায় খায়, কিমা পরোটা, খাসির লেগ রোস্ট, মুরগি, হাঁস, কবুতর, কোয়েল পাখির ফ্রাই, সুতি কাবাব. শামী কাবাব, জালি কাবাব, টিক্কা কাবাব, মোরগ পোলাও, পরোটা, কাটলেট, ডিম চপ, কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি, গরু-খাসির হালিম, ছোলা-বুট, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, ঘুগনি, নিমকি, জিলাপি, শাহী জিলাপি, রেশমি জিলাপি ও দইবড়া।

এছাড়া তরল জাতীয় ইফতারের মধ্যে লাবাং, লেবুর শরবত, তোকমার শরবত, লাচ্ছি, নূরানি লাচ্ছি, ছানামাঠা, মাঠা, পেস্তা বাদামের শরবত, রসমালাই, দধি, ফিরনি, পনির, ছানার মিষ্টি ও ফালুদা বিক্রি করা হচ্ছে চকবাজারে।

সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চার-পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের ইফতার আইটেম রয়েছে চকবাজারে। এর মধ্যে সুতি কাবাব, শামী কাবাব, আস্ত মুরগি, হাঁসের রোস্ট, খাসির লেগ রোস্ট সর্বনিম্ন ৮৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

নেওয়াজ গাজী নামে এক দোকানি বলেন, শরবত থেকে শুরু করে ইফতারের অভিজাত সব আইটেম চকবাজারে পাবেন। এটা ঐতিহ্যবাহী বাজার। সারা দেশে যেসব খাবার পাওয়া যাবে না সেগুলো এখানে খুঁজে পাবেন। দামও মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে। এখন বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। সে বিষয় মাথায় রেখে আমরা এমনভাবে দাম রেখেছি যেন তা ক্রেতাদের ওপর চাপ না হয়। 

আব্দুল আউয়াল নামে আরেক শরবত ব্যবসায়ী বলেন, আমার বাবা এই ব্যবসা করতেন। এখন আমি মাঠা, লাচ্ছি, লাবাং বিক্রি করছি। আমি নিজেই সবকিছু সংগ্রহ করে শরবত বানাই। মাঠা ৮০ টাকা, লাচ্ছি-লাবাং ১২০-১৫০ টাকায় (লিটার) বিক্রি করছি। 

স্থানীয়রা জানান, রোজার মাসে প্রতিদিনই এ রকম ভিড় হয় চকবাজারে। তবে শুক্রবারসহ ছুটির দিনে ভিড়টা একটু বেশি হয়। ঐতিহ্যবাহী শাহী জামে মসজিদে দূর দূরান্ত থেকে এদিন মানুষ জুমার নামাজ পড়তে আসেন। 

মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে আমার পাইকারি চুড়ির দোকান। ছোটবেলা থেকে আমরা এখানে ব্যবসা করছি। বাপ-দাদার আমল থেকে এ রকম ইফতার বাজার দেখে আসছি। রমজান মাসে তাদের জন্য আমরা রাস্তা উন্মুক্ত করে দিই। কারণ এটি হচ্ছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। বহু দূর থেকে মানুষজন এখানে আসেন। চকবাজার শাহী জামে মসজিদ দেখতে আসেন। এলাকার মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে এগুলো ভালোই লাগে। 

পরিবার-পরিজনের জন্য ইফতার নিতে এসেছেন এমন কয়েকজন জানান, চকবাজারের নাম ডাক শুনে তারা এসেছেন। অনেকে অন্যান্য বছরও এসেছিলেন। আবার অনেকে একেবারেই প্রথম। 

তানভীর আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছি। চকবাজারের ইফতারের অনেক নাম শুনেছি। সেজন্য আজ টেস্ট করার জন্য এসেছি। সব ঘুরে দেখছি। এখনো কিছু কেনা হয়নি। শেষ সময়ে কিনব। 

সিরাজুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ফেসবুকে চকবাজারের ইফতার বাজার সম্পর্কে বিভিন্ন ভিডিও দেখে আজ কিনতে এসেছি। খাসির লেগ রোস্ট, আস্ত হাঁস রোস্ট আর শরবত নিয়েছি। আমি ফার্মগেট থেকে এসেছি। রাস্তা ফাঁকা ছিল। আসতে বেশি সময় লাগেনি। এখন যেতে কত সময় লাগে সেটাই বিষয়।

এই ক্রেতা বলেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া উচিত মানুষের বিশ্বাসকে। তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখিয়ে খাবারের মান বজায় রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাই। 

এএইচআর/এসকেডি