উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো শুষ্ক বালুচরে পরিণত হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সভাপতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান।

শুক্রবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে 'জীবন ও জীবিকার জন্য পানি' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। যৌথভাবে বৈঠকের আয়োজন করে পরিজা ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র।

প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান লিখিত বক্তব্যে বলেন, দখল, ভরাট আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন এবং দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য এবং জীববৈচিত্র শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। দেশের নদীগুলোর প্রায় প্রতিটিরই একই দশা। তিস্তার পানি প্রবাহ ব্যাপকহারে কমে গেছে। পদ্মা এখন মৃতপ্রায়, যমুনায় পড়েছে চর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও কর্ণফুলী দখল, ভরাট ও দূষণের ভারে বিষাক্ত নিশ্বাস ফেলছে।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশ্ব পানি দিবসের বার্তায় শান্তির জন্য পানি ব্যবহার এবং আন্তঃসীমান্ত পানি সহযোগিতার জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী— বিশ্বে বর্তমানে ২.২ বিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত এবং এদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

পরিজার তথ্য অনুসারে— দেশে ছোট-বড় ৪০৫টি নদী রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৭টি। ৫৪টি ভারতের এবং ৩টি মিয়ানমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমী নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। 

বৈঠকে পানির সুরক্ষায় কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে— অপরিশোধিত শিল্পকারখানার বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা। খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষ করা। গবেষণা জোরদার করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা। ভূগর্ভে কৃত্রিমভাবে পানি রিচার্জ করা ইত্যাদি।

পরিজা’র সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল বলেন, পানির সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা সম্পর্কিত। পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। একদিকে বস্তি এলাকায় হাজার হাজার মানুষ এক কলসি পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। অন্যদিকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এক চুমুক খেয়ে পুরো বোতলের পানি ফেলে দেওয়া হয়। এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার পানি অপচয় করা হচ্ছে।

আলোচনায় অংশ নেন- মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুবুল হক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন, অধ্যক্ষ আকমল হোসেন প্রমুখ।

ওএফএ/এমজে