রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে মোহাম্মদ ফয়সাল (২৭) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি জানায়, মাদক ও আধিপত্যের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাং গ্রুপের হামলায় নিহত হন ফয়সাল। একই ঘটনায় ছুরিকাঘাতে রানা ওরফে রানু নামের অপর এক তরুণ চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ডিবি মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনাল টিম হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও পটুয়াখালী, নেত্রকোনা জেলায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

গ্রেপ্তাররা হলেন, শাহিন ওরফে নাডা শাহিন (২৪), মো. মুরাদ হোসেন (২৪), পারভেজ আহম্মেদ (২২), মো. ইয়াসিন (২০), মো. সাইফুল ইসলাম সাইমন (৩০), মো. নাসির উদ্দিন (২০), মো. হৃদয় ওমর সাফি গন্ডার (২০), মো. রাজিব মিয়া (২৫), শাহনেওয়াজ ওরফে কাল্লু (২৮), তানজিলা (২৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি, রামদা ও ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (২২ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ফয়সাল নামের একজন নিহতের ঘটনায় একটি মামলা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা পালিয়ে যায়। মামলার তদন্তে নেমে জানতে পারি প্রথমে একই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। দুটির মধ্যে একটি গ্রুপ হলো পেপার সানী গ্রুপের সদস্য মো. শাহিন ও তার বোন তানজিলার সঙ্গে গত ১৫ মার্চ বিকেলে মাদকের টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একই গ্রুপের সদস্য ফয়সাল ও রানা ওরফে রানুর সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরে পেপার সানী গ্রুপের সদস্য শাহিন ওরফে নাডা শাহিন এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সায়মুন গ্রুপের রাব্বী ওরফে গালকাটা রাব্বী ও অন্যান্যদের জানায়।

তিনি বলেন, পরের দিন ফয়সাল, তার বন্ধু রানা ওরফে রানু এবং আরও দুই বন্ধুসহ রিকশায় করে পল্লবীর কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার শেষে বাসায় ফিরছিল। এসময় তারা ফয়সালকে পল্লবী থানার সেকশন-১২ এলাকায় চাপাতি, তলোয়ার, রামদা, সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। পরে নিহত ফয়সালের মা এসে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফয়সালকে মৃত ঘোষণা করেন। ফয়সালের বন্ধু রানা ওরফে রানু আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

ঘটনার পর ফয়সালের বাবা শাহাদাত হোসেন পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় ডিবি ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

তিনি আরও বলেন, মিরপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা প্রায়ই মাদক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটায়। উত্তরা এলাকায় বেশ কিছু বড় ভাইদের নাম পেয়েছি যারা কিশোর গ্যাং গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া মিরপুর ও উত্তরার পাশাপাশি মোহাম্মদপুরেও বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। রাজধানীর কোনো এলাকায় বড় ভাইদের বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। কোনো বড় ভাইয়ের নামে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। আমাদের গোয়েন্দা পুলিশের প্রত্যেকটি টিম রাজধানীর প্রত্যেক এলাকায় কাজ করছে। 

ডিবির মিরপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রাশেদ হাসান বলেন, পল্লবী এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এই ঘটনা ছাড়াও অতীতেও কিশোর গ্যাং সদস্যরা বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। জড়িতদের ধরতে ধারাবাহিক অভিযান চলছে।

এমএসি/এমএসএ