স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ২০-৩০ বছর আগেও ঢাকা শহরে ৬০ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পেত না। এখন কিন্তু অবস্থা বদলেছে। এখন শুধু ঢাকা নয়, রাজশাহী, চট্টগ্রামেও আমরা সুপেয় পানির বন্দোবস্ত করছি। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এটা নিয়ে ওয়াসা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। 

রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‌‘শান্তির জন্য পানি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও এবং সুইডেন অ্যাম্বাসি এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক তানভীর হাসান। 

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) তুষার মোহন সাধু খাঁ এবং ইউনিসেফ ওয়াশের প্রধান পিটার মায়েস।

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয়, এখন পুরো বিশ্ব যুদ্ধে নিয়োজিত পানির জন্য। যুদ্ধের কারণে গাজায় পানির জন্য হাহাকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গত ৩-৪ মাস ধরে পানি টার্গেট করে হামলা হচ্ছে। তবে এবার পানি দিবসে ইউএন খুব ভাল স্লোগান নির্ধারণ করে করছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চীনেও নদী আছে। আমাদের কৃষি কাজে ও শিল্পখাতে বিপুল পরিমাণ পানির ব্যবহার হয়। বাংলাদেশ এখনো পানির জন্য নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি, শিগগিরি আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করতে পারব৷ আমাদের গন্তব্য উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া। কিন্তু আমরা খাদ্য ও পানি সমস্যায় ভুগছি দূষণজনিত কারণে। সার, কীটনাশক, মেশিনারিজ ওয়াস্টের কারণে এখন প্রান্তিক অঞ্চলেও পানির দূষণ বাড়ছে। পানির ক্ষেত্রে অর্জন আছে। তবে চ্যালেঞ্জও অনেক। চট্টগ্রামে এখন সুপেয় পানির বন্দোবস্ত করা কঠিন। কারণ আমাদের পানির উৎস তো কর্ণফুলী ও হালদা। সেখানে অনেকে ইন্ড্রাস্ট্রি করছে। এখন লবণ পানি শোধন করে সুপেয় করা হচ্ছে, যা খুবই ব্যয়বহুল। 

দ্বিতীয় সেশনে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. বারদান জং রানা, ইউনিসেফ বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট।

ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছে সুইডিশ সরকারের কাছে তা প্রশংসনীয়। তবে ভৌগোলিক জায়গা থেকে বাংলাদেশকে স্বচ্ছ ও সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনায় আরও জোরদার করতে হবে।  

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব (স্থানীয় সরকার বিভাগ) মুহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেকটি জনগণকে স্বচ্ছ ও সুপেয় পানি নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে স্থানীয় সরকার জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সুপেয় পানির টিউবওয়েল স্থাপন করছে।
 
নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন কভারেজের দিক দিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষ স্থান দখল করে আছে দাবি করে সচিব বলেন, পল্লী এলাকার বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ পানির উৎস (টিউবওয়েল) ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও পল্লী পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অবকাঠামো নির্মাণোত্তোর রক্ষণাবেক্ষণে ইউনিয়ন পরিষদকে WATSAN কমিটির মাধ্যমে কারিগরি সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্য পরিচর্যা জোরদারকরণ এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যা , সাইক্লোন, মহামারী ইত্যাদির কারণে সৃষ্ট জরুরি পরিস্থিতিতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।

এমএম/জেইউ/এসকেডি