অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে পরিবারের জন্য কিছুদিন আগে নতুন একটা টিভি আরেকটা বক্স খাট কিনেছিলাম, আগুনে আমার সব কিছু ছাই হয়ে গেছে। বাইরে কাজে ছিলাম, তাই ঘর থেকে একটা কাপড়ও বের করতে পারিনি।

শনিবার (২৪ মার্চ) বনানীর গোডাউন বস্তিতে লাগা আগুনে নিঃস্ব হয়ে এভাবেই আর্তনাদ করে কাঁদছিলেন মিলি আক্তার নামের এক নারী। তার মতো এ রকম আরও প্রায় দুই শতাধিক পরিবার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

মিলি আক্তার বলেন, আমরা দুই তলা টিনের ঘরে থাকতাম। ওপরে আমার দুই ভাই থাকত, আর নিচে আমি পরিবার নিয়ে থাকতাম। কিছুদিন আগেই আমি ও আমার স্বামী মিলে অনেক কষ্টে টেলিভিশন আর বক্স খাট কিনেছিলাম। আগুন লাগার সময় আমি কাজে ছিলাম। এসে দেখি সব পুড়ে শেষ।

তিনি বলেন, ওপর ও নিচের ঘরে থাকা কোনো কিছুই আর নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটা কাপড়ও বের করতে পারিনি। এখন কী পরব, কই যাব... কিছুই জানি না।

মিলি আক্তারের মতোই আগুনে নিঃস্ব হয়েছেন এখানকার আরেক বাসিন্দা জেসমিন আক্তার। তিনি বলেন, হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকার শোনার পর পর দৌড়ে বের হয়ে গেছি। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি বাতাসের সাথে আগুন দ্রুত আমাদের ঘরের দিকেও চলে এসেছে। সাথে সাথে বাচ্চাদের নিয়ে দৌড়ে বের হয়েছি। এখানকার কেউই কিছু নিয়ে বের হতে পারেনি।

এদিকে পুড়ে যাওয়া ঘরে কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে কি-না তা খুঁজে দেখছে এখানকার পরিবারগুলো। কেউ কেউ ঘর থেকে লোহার দা ও বটি বের করতে পারছিলেন। ঘরে থাকা আসবাবপত্র ও সব মালামাল হারিয়ে পুড়ে যাওয়া ঘরের ওপর বসে কাঁদছেন অনেকে।

এর আগে, রোববার বিকেল ৪টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বনানীর এ বস্তিতে। সোয়া ৪টায় ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় পরে আরও সাতটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজে যোগ দেয়। অবশেষে ১০টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল সাড়ে ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।  

জানা গেছে, আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোডাউন বস্তির একাংশ। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি ঘর পুড়েছে।

টিআই/কেএ