আসন্ন ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাই এখন থেকে রাজধানীর প্রতিটি সড়কের ফুটপাত হকার ও অবৈধ পার্কিং মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

এছাড়া রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতে প্রবেশদ্বারগুলোতে যাত্রীদের অসহনীয় যানজটে পড়তে হবে। এসব যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। তা না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন সকাল অবধি রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল অচল হয়ে যেতে পারে বলেও জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বুধবার (২৭ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এবারের ঈদে দেশে ৭১৪টি স্থানে যানজট হতে পারে এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। যার মধ্যে ১৪০টি স্পটে প্রখর নজরদারি দরকার। ১০টি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ২১৮টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ দুর্ঘটনার স্পটের বিষয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সতর্ক করেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব স্পটেই ৬০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয় বলে দাবি করে ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও টোল পয়েন্টগুলো যানজটমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু কিছু অসাধু পরিবহন মালিক-চালকরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কোনো পথে ঈদের ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যাওয়ার কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন কম ভাড়ায় বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে অথবা পণ্যবাহী পরিবহনের ছাদে যাতায়াতে বাধ্য হয়। এতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে থাকে। তাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে অতীতের বিভিন্ন সময়ের মতো কেবল কাগুজে বাঘের মতো হুঁশিয়ারি নয়, প্রকৃতপক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে প্রতি বছর সড়ক ও নৌপথে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, নৌপথে পর্যাপ্ত বয়া-বাতি ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকা, একজন চালককে বিশ্রামহীনভাবে ১০/১২ ঘণ্টা থেকে ১৫ ঘণ্টা যানবাহন চালাতে বাধ্য করার কারণে এবং অদক্ষ চালক দিয়ে আনফিট যানবাহন চালানোর কারণে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ঈদে কয়েকশ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে।

সংগঠনের মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, ২০২৩ সালে ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছে। এবারো ঈদে ছুটি ব্যবস্থাপনা করা না গেলে যাত্রীর চাপ দ্বিগুণ থাকায় সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি একের পর এক রেল দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রেল চলাচল ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি কাটিয়ে ওঠা না গেলে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি আরও বাড়াবে। অনলাইনে রেলের শতভাগ টিকিট বিক্রির কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়বে। এসব টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটের আসন্ন ঈদে আগে ও পরে ১০ দিনের বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি এয়ার লাইন্সগুলোর টিকিট বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি দখল করে নেওয়ায় এবারের ঈদে যাত্রী সাধারণকে এসব ফ্লাইটের টিকিট কয়েকগুণ বাড়তি দামে কিনতে হবে।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে এবারের ঈদে যাত্রা পথে অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, টানাপার্টিসহ টার্মিনালে নানা প্রতারক চক্রের তৎপরতা বাড়বে। তাই প্রতিটি বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশনে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানান। এছাড়াও মহাসড়কে ডাকাতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।

এমএইচএন/এসএসএইচ