সংবাদ সম্মেলনে মো. হারুন-অর-রশীদ

পাকিস্তানের একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের। ২০০৫ সালের দিকে ভগ্নিপতি নেয়ামতউল্লাহর মাধ্যমে পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন তিনি।

রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশীদ।

তিনি বলেন, রিমান্ডে থাকা মামুনুল হকের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকার উৎখাতে মামুনুল সব ধরনের পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে পাকিস্তানে যান। সেখান থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সংহিংসতার ঘটনা ঘটান।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিসি হারুন বলেন, আমরা রিমান্ডের সাত দিন তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছি, কিছু বক্তব্য পেয়েছি। তার মোবাইলটি উদ্ধার করেছি। মোবাইলের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তার মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে কাতার, দুবাই, পাকিস্তান থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা এসেছে। মামুনুল বাবরি মসজিদের নাম বলেও টাকা এনেছেন। তিনি ভেবেছেন, মসজিদের নাম বললে অনেকে টাকা দেবেন। বিশেষ করে ভারত বিদ্বেষীরাও টাকা দেবেন। 

তিনি বলেন, এই টাকা দিয়ে তিনি উগ্র জঙ্গিবাদী কায়দায় বাংলাদেশের কয়েকটি মসজিদের ও মাদ্রাসার কিছু কিছু লোককে ম্যানেজ করেছেন এবং নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাকে যেন বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজে ডাকা হয় সে ব্যবস্থা করেছেন।

হারুন বলেন, মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি মুফতি নেয়ামতউল্লাহ দীর্ঘদিন পাকিস্তানে থাকার পর জামিয়া রাহমানিয়ায় আসেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্ত মুফতি নেয়ামতউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মামুনুলের। নেয়ামতউল্লাহ গ্রেফতার হয়েছিলেন একবার। পরে মামুনুল হকের বাবা আজিজুল হক চার দলীয় জোট সরকারের আমলে তাকে জেল থেকে মুক্ত করান।

তিনি বলেন, নেয়ামতউল্লাহ ও মামুনুল হক একসঙ্গে ৪৫ দিনের বেশি সময় পাকিস্তানে ছিলেন। পাকিস্তানের একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনকে মডেল ধরে বাংলাদেশে মওদুদি, সালাফি, হানাফির মতাদর্শের মানুষকে একত্রিত করেন তারা। পাশাপাশি বিএনপি-জামাতের সাথে আঁতাত করেন। অপরদিকে বোন জামাইয়ের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাও যোগাযোগ করে। সব মিলিয়ে হেফাজতকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে কাওমি মাদ্রাসার ধর্মভীরু মানুষকে প্রভাবিত করে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন তিনি।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি সংসদ ভবন, গণভবন, বঙ্গভবন, বড় বড় আলেম ওলামা, এমপি-মন্ত্রী কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না। আমরা বললাম, ‘আপনি জাফর ইকবালকে কটূক্তি করলেন, শাহরিয়ায় কবিরকে মুরগিচোরা বললেন, আপনার দিকে কেউ তাকালে চোখ তুলে ফেলবেন, এগুলো কেন বললেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘এগুলো রাজনৈতিক কথাবার্তা। বক্তব্য দেওয়ার সময় চলে এসেছে।’

হারুন বলেন, রিমান্ডে তাকে আমরা জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি একটি সভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কেউ কটূক্তি করলে সে ১২ ঘণ্টার মধ্যে গুম হয়ে যায়।’ আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘কে এমন গুম হয়েছে?’ তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

তার প্রথম স্ত্রীর বাবা (শ্বশুর) ও বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিম ছিলেন ভায়রা ভাইা। এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান ডিসি হারুন। তিনি বলেন, বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল পুলিশের কাছে ৩-৪ টি বউয়ের কথা স্বীকার করেছেন।

সাংবাদিকদের একজন প্রশ্ন করেন, যেই মামলায় মামুনুল গ্রেফতার হন সেই মামলার অন্যতম আসামি তার ভাই মাহফুজুল হক। সেই আসামি কীভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন? উত্তরে হারুন বলেন, তিনি কারো সঙ্গে দেখা করেছিলেন কি না আমার তা জানা নেই। তবে আমরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি, এই মামলায় যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে সবাইকেই আইনের আওতায় আনতে হবে।

এআর/আরএইচ/জেএস