কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানার বত্রিশ এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. এমাদ উদ্দিন। তার সঙ্গে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের ক্যাপ্টেন পরিচয়ে দিদারুল ইসলাম জমি কেনার নামে সখ্য গড়ে তোলেন। পরে এমাদের দুই সন্তানের একজনকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি ও ছেলেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর নামে হাতিয়ে নেন প্রায় ৪৩ লাখ টাকা।

টাকা নেওয়ার পর চাকরি দেওয়া বা বিদেশে পাঠানো কোনোটিই না করায় প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী এমাদ।

মামলার তদন্তে নেমে সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা(ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন– সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পরিচয় দেওয়া দিদারুল ইসলাম (৩০) ও তার ভাগ্নি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেওয়া তাপসী রাবেয়া বসরি (২৮)।

ডিবি বলছে, দুজনেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। তারা দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন। এমনকি তাদের হাতে পুলিশ সদস্যও প্রতারিত হয়েছেন।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির পুলিশ অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি দেওয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর নামে ধাপে ধাপে প্রায় ৪৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ইমাম সাহেব আমাদের কাছে এসে অভিযোগ করেন, তার পরিচিত একজনের সঙ্গে প্রতারণা করে ৪৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয়ে ভুক্তভোগীর ছেলেকে অস্ট্রেলিয়া ও মেয়েকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক চক্র।

হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতারক দিদার সেনাবাহিনীর পোশাক পরে ভুক্তভোগী ইমামের বাসায় যেতেন। এসময় তার সঙ্গে তাপসী রাবেয়া বসরি নামের এক তরুণীকে নিয়ে যেতেন।

তিনি বলেন, দিদারের ভাগ্নি বসরি নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলে পরিচয় দেন। এ প্রতারক চক্রের সদস্যরা মূলত বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করেন। এরপর জমি কেনার নামে পরিচিত হয়ে সখ্য গড়ে তোলেন। সেনাবাহিনীর পোশাক ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে তারা টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরির ক্ষেত্রে প্রতারক চক্রটি প্রথমে এডমিট কার্ড জাল করে। পরে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে প্রতারক চক্রের সরবরাহ করা এডমিটের রোল নম্বর না মেলায় আবারও নতুন করে এডমিট কার্ড বানিয়ে দেয়। ভাইভাতেও একইভাবে জাল এডমিট ও ভুয়া রেজাল্ট শিট দেওয়া হয়।

হারুন অর রশীদ বলেন, ভুক্তভোগী ইমাদের মেয়েকে কোনো ধরনের পরীক্ষায় বসতে হয়নি। তাহলে বিনা পরীক্ষায় চাকরি হয় কীভাবে ভুক্তভোগীরা এমন প্রশ্ন করলে প্রতারক তাদের উত্তরে বলতেন, পরীক্ষা দেওয়া লাগে না। সবই টাকার খেলা। টাকা দিচ্ছেন আর পরীক্ষায় পাস হয়ে যাচ্ছে।

ডিবি প্রধান বলেন, কিশোরগঞ্জের এক পুলিশ সদস্যের পরিবারের একজনকে একইভাবে চাকরি দেওয়ার নামে ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা চলমান রয়েছে। আমরা তাদের রিমান্ডে নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার দুই প্রতারকই উচ্চ শিক্ষিত। গ্রেপ্তার দিদারুল অনার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তার ভাগ্নি ও কথিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

জেইউ/এসএসএইচ