নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় সেই ফ্ল্যাটের চুলায় ভাত বসানো ছিল। চুলাটি জ্বলন্ত অবস্থায় রেখেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন ঐ ঘরের লোকজন। সিলগালা করে দেওয়া ঐ ভবনে গিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। গত ২৩ এপ্রিল (শুক্রবার) ভোর ৬টায় ওই ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন। 
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, যে রান্নাঘর থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত, সেখানে চুলার ওপর ভাতের পাতিল। দুই চুলার একটি বন্ধ থাকলেও অপরটি চালু ছিল। 

ধারণা করা হচ্ছে, রাতে অল্প আঁচে ভাত বসিয়ে ঘুমাতে চলে গিয়েছিলেন। বাতাসে বা কোনোভাবে আগুন নিভে গেলেও চুলার গ্যাস কয়েক ঘণ্টায় গোটা ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে পড়ে একটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছিল। সেহেরির সময় সেই চুলায় ফের আগুন জ্বালাতে গিয়েই বিস্ফোরণ ও আগুন ধরে যায়।

দেখা গেছে,  তিনতলা ভবনটির তৃতীয় তলায় চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার মধ্যে উত্তর-পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে রুমের পূর্বদিকের দেয়াল ভেঙে পাশের ভবনের ছাদে আছড়ে পড়ে। ফ্ল্যাটের দক্ষিণ দিকের রুম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই কক্ষের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। রুমের দরজা ভেঙে ও চৌকাঠ ভেঙে গেছে।

দুটি রুমের আসবাবপত্রসহ ফ্রিজ অন্যান্য জিনিসপত্র দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। তবে ফ্ল্যাটের দক্ষিণ দিকের কক্ষে বেশ কিছু আসবাবপত্র পুড়ে গেলেও উত্তর দিকের কক্ষের ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভবনের কাঁচের গ্লাসগুলো ছিটকে গেছে। ভেঙে গেছে দ্বিতীয় তলার কাঠের দরজাও। আট বছর আগে শুরু হওয়া নির্মাণাধীন ভবনটির ১২টি ফ্ল্যাটে ১৩টি পরিবার বসবাস করত। যার মধ্যে বিস্ফোরিত ফ্ল্যাটে এক সঙ্গে দুটি পরিবারের ১১ জন সদস্য বসবাস করতেন।

চুলা থেকেই গ্যাস বের হয় ও বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘বাসায় গ্যাসের চুলা লিকেজ হয়ে বা রান্নার পর ভালোভাবে চুলা বন্ধ করেনি। ফলে গ্যাস বের হতে থাকে। তাছাড়া ঘরের সবগুলো দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। 

তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নার চুলা জ্বালাতে গেলে বিস্ফোরণ হয়। এতে ভবনের একটি দেয়াল, দরজা ও জানলা ভেঙে যায়। পরে স্থানীয়রা এসে আগুন নেভায়।

তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড  ট্রান্সমিশন কোম্পানির ফতুল্লা জোনের ম্যানেজার প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে এটি এক্সক্লুসিভ না কি গ্যাস বিস্ফোরণ। তবে প্রাথমিকভাবে গ্যাস বিস্ফোরণ মনে হচ্ছে। যদি গ্যাস বিস্ফোরণ হয়ে থাকে তাহলে বলব আমাদের রাইজার পর্যন্ত লাইন ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নেই। চুলা হয়তো বন্ধ করেনি বা লিকেজ ছিল। সেখান থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। দুইটি কক্ষেরই দেয়াল উড়ে পাশের বিল্ডিংয়ে পড়েছে।’

রাজু আহমেদ/ওএফ